বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়মিত ভক্তদের কাছে মোশাররফ হোসেন রুবেল একটি পরিচিত নাম। সাবেক এই বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনার বর্তমানে মুমূর্ষু অবস্থায় পরে আছেন স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউ তে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে মোশাররফ রুবেল বিপিএলও খেলেছিলেন। কিন্তু তার কদিন পরেই পেলেন জীবনের খুব সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ সংবাদটা। ঐ বছরের মার্চ মাসে রুবেলের ব্রেইন টিউমার ধরা পরে! ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শুরু করেন কেমোথেরাপি নেওয়া। সিঙ্গাপুরে ৬ মাসেরও বেশি সময় ট্রিটমেন্ট নিয়ে অবস্থার খানিক উন্নতিও ঘটে। দেশে ফিরে আবারো ক্রিকেটে ফেরার চেষ্টা করছিলেন।
কিন্তু ২০২০ এর জুন মাসে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিক্ষায় দেখা যায় টিউমার টি আবার বেড়ে উঠছে। করোনার প্রকোপে তখন সিঙ্গাপুরে যেতে না পারায় ভিডিও কনসাল্টেনসির মাধ্যমে তার চিকিৎসা চলতে থাকে। প্রথমে মৌখিকভাবে কেমো নিতে থাকেন। তবে তাতে অবস্থার কোনো পরিবর্তন না ঘটায় আবার শারীরিকভাবে কেমো নেওয়া শুরু করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কেমোথেরাপি নেওয়ার কারণে ইডেমা, এপিলেপ্সির মতো জটিলতা দেখা দেয় রুবেলের শরীরে! ফলে ২০২১ এর অক্টোবরে প্রথমবার আইসিইউ তে নেওয়া হয় তাকে। পরের মাসে ভারতের চেন্নাইতে অস্ত্রোপচার করানো হয়।
ব্রেইন টিউমারের এই ব্যয়বহুল চিকিৎসার শুরুর দিকে সরকার ১০ লক্ষ টাকার অনুদান দেয়। ক্রিকেট বোর্ড থেকেও ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে সহায়তা করা হয়। এছাড়াও সতীর্থ ক্রিকেটাররা অনেকেই মোশাররফ রুবেলকে নানা সময় আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। তবুও এই ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়েছে রুবেলকে। চিকিৎসার ব্যয় বহনে এক পর্যায়ে নিজের ফ্ল্যাটও বিক্রি করতে বসেছিলেন! তবু কখনো কারো কাছে হাত পাতেননি।
গত বছর সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি মোর্ত্তাজা এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিসিবির উপর ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন এইজন্য যে এতো বিশাল ফান্ড থাকা সত্ত্বেও রুবেলকে আর্থিকভাবে আরো সাহায্য করেনি কেন বিসিবি/ব্যয়ভার বহন করেনি কেন বিসিবি।
জাতীয় দলের হয়ে খুব বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি এই স্পিনারের। ২০০৮ সালে ওয়ানডে অভিষেকের পর ২০১৬ সালে টি২০ অভিষেক হয় এবং সেই বছরই দেশের হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন মোশাররফ হোসেন রুবেল। বাংলাদেশের শততম ম্যাচ জয়েও ছিল তার অবদান।
২০১৩ সালে বিপিএল এর প্রথম আসরের ম্যান অফ দ্যা ফাইনাল হয়েছিলেন মোশাররফ হোসেন রুবেল। সেই ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের হয়ে ২৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বিপিএল এর প্রথম শিরোপা জিততে সাহায্য করেন ঢাকাকে।
বিপিএলে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন প্রায় নিয়মিত মুখ।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ছিলেন বরাবরই সফল। লিস্ট-এ এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট মিলিয়ে ২১৬ ম্যাচে নিয়েছেন মোট ৫১২ উইকেট। রয়েছে দুটি সেঞ্চুরিও!
সম্প্রতি মোশাররফ হোসেন রুবেলের অসুস্থ অবস্থার একটি ছবি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। গতকাল রাতে হঠাৎই সাবেক ওপেনার শাহরিয়ার নাফিস তার ফেসবুক পেইজে জানান শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে মোশাররফ হোসেন রুবেলকে আবারো আইসিইউ তে নেওয়া হয়েছে!
মোশাররফ হোসেন রুবেল আবারো সুস্থ হয়ে সবার মাঝে ফিরুক…এমনটাই প্রত্যাশা ভক্তদের।