করোনার কারণে পেছাতে পেছাতে অবশেষে অনিশ্চয়তা কাটিয়ে সম্পন্ন হলো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ২০১৯-২০। সাধারণত ওডিআই ফরম্যাটের হয়ে থাকলেও আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এবারের ডিপিএল আয়োজন করা হয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।
এবারের ডিপিএলে পারফরম্যান্স বিচারে অভিজ্ঞদের তুলনায় উঠতিদের দাপট ছিল কিছুটা হলেও বেশি। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে আসা তরুণ তুর্কীদের অনেকেই ছিলেন লাইমলাইটে।
মাহমুদুল হাসান জয় কে দিয়ে শুরু করা যাক। বিশ্বকাপজয়ী অনূর্ধ্ব-১৯ দলের তারকা ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান জয় এবারের আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তার দল ‘ওল্ড ডি ও এইচ এস’ সুপার লিগে খেলতে সমর্থ হলে হয়তো তিনিই হতেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ১৩ ম্যাচে তার রান ৩৯২। তবে স্ট্রাইক রেট টা (১২১.৩৬) আরো বেশি আশা করাই যায় তার থেকে। এছাড়া মোহাম্মদ নাইম শেখ, নাজমুল শান্ত, আনিসুল ইমন, মেহেদি হাসান, মুনিম শাহরিয়াররা আছেন সেরা ১০ এর তালিকায় (মুনিম ১১শ তম)। তবে এদের মধ্যে কেবল মুনিম আর মেহেদির স্ট্রাইক রেট ১৪০ এর উপরে।
এবার আসা যাক অভিজ্ঞদের পালায়। ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত মুখ মিজানুর রহমান এবারের আসরের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান। রান সংগ্রাহকের তালিকায়ও রয়েছেন শীর্ষে। ১১ ম্যাচে ৫২ গড়ে করেছেন ৪১২ রান। স্ট্রাইক রেট ১৩৩.৯৭। মন্দ বলা যায় না। তবে মাহমুদুল জয়ের মতো নিজের দলকে সুপার লিগে উঠাতে ব্যর্থ মিজানও।
স্ট্রাইক রেট বিচারে সবার উপরে আছেন শেখ জামাল দলপতি নুরুল হাসান সোহান। ১৪৯.৬১ স্ট্রাইক রেটে ১৬ ম্যাচে ৩৫ গড়ে ৩৮৯। জাতীয় দলে ফেরার জন্য যথেষ্ট। তবে ধারাবাহিক থাকতে পারবেন তো!?
রান সংগ্রাহকের তালিকায় চার নম্বরে থাকা টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকও দেখিয়েছেন টি-টোয়েন্টি তে তিনি কতটা সমর্থ, তবে মন গলাতে পারেননি নির্বাচকদের। জিম্বাবুয়ে সিরিজে শুধু টেস্ট দলেই জায়গা হয়েছে তার।
বোলিংয়ে এবার ছিল পেসারদের জয়জয়কার। সেরা দশে স্পিনার মাত্র ২ জন- মেহেদি হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
জাতীয় দলের পেস অলরাউন্ডার সাইফুদ্দিন রয়েছেন শীর্ষে (২৫ উইকেট) । ব্যাটিংয়েও মাঝে মাঝে লেট মিডল অর্ডারে দেখিয়েছেন ঝলক। জাতীয় দলে নিঃসন্দেহে এমন পারফরম্যান্স নিয়মিত দেখার অপেক্ষায় থাকবে বাংলার ক্রিকেটপ্রেমিরা।
জাতীয় দলের টেস্ট স্কোয়াডের নিয়মিত সদস্য কামরুল ইসলাম রাব্বি এবার টি-টোয়েন্টি তে দেখিয়েছেন তার বোলিং ক্যারিশমা। সাইফুদ্দিনের চেয়ে একটি উইকেট কম নিয়ে রাব্বি আছেন তালিকার ২ নম্বরে।
নতুন মুখ তানভির হাসান এর বোলিং ছিল আশা জাগানিয়া। এছাড়াও যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের তানজিম হাসান সাকিব, শরিফুল, সালাহউদ্দিন শাকিল দের বোলিং ছিল চোখে পরার মতো। এমন পারফরম্যান্স জাতীয় দলের ভবিষ্যতের জন্য সুখবরই বটে। মুস্তাফিজ, রুবেলদের বিকল্প তৈরিতে আরো কাঠখড় পোড়ানো উচিত বিসিবির।
অলরাউন্ডার বিবেচনায় আসরের সেরা খেলোয়াড় মেহেদি হাসান। বছর দুয়েক ধরেই ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকভাবে অলরাউন্ড নৈপুণ্য প্রদর্শন করে আসছেন এই ডানহাতি অলরাউন্ডার। ব্যর্থ নিউজিল্যান্ড সফরের পর আবারো সুযোগ পাচ্ছেন জিম্বাবুয়ে সফরে।
এছাড়া অলরাউন্ডার হিসেবে সাইফুদ্দিন এবং বিশেষ করে শামিম পাটোয়ারীর পারফরম্যান্স ছিল প্রশংসার দাবিদার। শামিম পাটোয়ারীর হার্ড হিটিং ব্যাটিং স্টাইল ও কার্যকরী অফ স্পিন বোলিং কে কাজে লাগাতে জাতীয় দলের জিম্বাবুয়ে সফরে নেওয়া হয়েছে পরিক্ষামূলক ভাবে। সামনের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য মেহেদি শামিমদের মতো ক্রিকেটারদেরই তো দরকার দলে।
তবে লিটন দাস, মিথুন, আফিফ, মোসাদ্দেক, সৌম্য রা যেন এখনো নিজেদের খুজে বেড়াচ্ছেন। ‘লর্ড’ তকমা গাতে জড়িয়ে আর কতদিন! পুরো ডিপিএলে তাদের থেকে হাতে গোনা কয়েকটিই বলার মতো ইনিংস দেখা গেছে। সৌম্যের জায়গা শুধু টি-টোয়েন্টি তে। মিথুন, মোসাদ্দেক আর লিটন ওডিআই তে জায়গা পেয়েছেন ঠিকই..কিন্তু তাদের রান পাবার নিশ্চয়তা কে দেবে!?
জাতীয় দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের কেউই রান বা উইকেটের দিক থেকে ওপরের দিকে নেই। কিন্তু এতে মাথা ব্যথারও কিছু নেই। জায়গা মতো কোপ দিতে তারা জানেন। আশার কথা হলো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বোলিংয়ে ফেরা, খুব আহামরি না হলেও.. মন্দও নয় একেবারে।
ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ভালো করেই তো জাতীয় দলে ডাক পান ক্রিকেটাররা। কিন্তু গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান তো তাদের পক্ষে কথা বলে না। জাতীয় দলে এসে যেন খেই হারিয়ে ফেলছেন তরুণরা
তরুণ মাহমুদুল হাসান জয় কিংবা ২৯ বছর বয়সী মিজানুর রহমান কে কেন দলে নেওয়া হলো না.. তা নির্বাচকেরাই ভালো বলতে পারবেন। ভবিষ্যতে সুযোগ পাবার আশা মাহমুদুল জয় রাখতেই পারেন, মিজান কি রাখতে পারবেন? নাকি বয়সের অজুহাতে জাতীয় দল স্বপ্নই থেকে যাবে!? তরুণরা যখন বারবার হতাশ করছেন, তখন মিজানদের উপর তো ভরসা রাখাই যায়.. নাকি?
উত্তর ভবিষ্যতের হাতেই তোলা থাক। আপাতত সামনের সিরিজগুলোয় একটা ধারাবাহিকতার তালাশ করা যাক.. বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের মাঝে!