কিছুদিন পরই শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা ওডিআই সিরিজ । ঠিক কিছু দিন আগেই বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা থেকে টেস্ট সিরিজ হারার দরুন ফেসবুক সহ প্রায় সকল গণমাধ্যমে প্রচুর সমালোচনাও হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো ঠিক একটা খেলা কি কোনো জাতির জাতীয়তাবাদ প্রকাশের মাধ্যম কিংবা দেশপ্রেম প্রকাশের মাধ্যম নাকি খেলাটার প্রতি নিছক ভালোবাসার থেকেই আবেগটকু কে মানুষ এক রকম বাড়াবাড়ি করছে ?
এ প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফি বিন মর্তুজা একবার প্রথম আলোতে এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন ক্রিকেট প্রেম কখনই দেশ প্রেম হতে পারে না।
দেশের মানুষ যেটা ধারনা করছে তা তাদের এক প্রকার ভ্রান্ত ধারনা ছাড়া কিছুই না। তাদের আবেগটুকুর প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করতেই হবে । কারন এতো খেলা পাগল জাতি পৃথিবীতে কমই আছে । ক্রিকেত খেলুড়ে দেশগুলতে দেখা যায় মানুষ খেলা হয়তো দেখে কিন্তু টেস্ট দেখতে এতো মানুষ কখনই যায় না।এ দেশের মানুষের মধ্যে দেখা যায় এনারা খেলা দেখা বা সাপোর্ট করাকেই দেশ প্রেম মনে করে । তবে জাতীয়তা বাদের মাধ্যম হিসেবে দেখে বা দেশের প্রতি আবেগ থেকেই বলুন মানুষ খেলাটা দেখে যা অনুপ্রেরণাদায়ক ।
কিন্তু আপনি যখন এই খেলাকে কেন্দ্র করেই আপনার দেশকে মাপতে যাবেন তা কোনো অংশেই ঠিক নয়।জাতীয়তা বাদ বলতে যা দিয়ে আপনি নিজের জাতির পরিচয় তুলে ধরছেন, নিজকে নিজের জাতিকে পৃথিবীর মধ্যে আলাদাভাবে চেনাচ্ছেন । ক্রিকেট হয়তো আপনার দেশখেলে কিন্তু এইটা কি শুধুই দেশের পরিচয় ঘটাবে বাইরে?
এদেশে হয়ত আরেকটা সাকিব আল হাসান জন্মাবে না কিন্তু তার মানে এই না তার ব্যক্তি স্বাধীনতাতে আপনি হাত দিবেন বা তাঁর জাতীয় দলে না খেলাকে আপনি দেশপ্রেমহীন্তা মানবেন।আবার কেউ হয়ত কোনো দল সাপোর্ট নাই করতে পারে তাকে আপনি দেশদ্রোহী বানাতে পারেন না। কেউ খারাপ করলে তাঁকে নিয়ে জে ধরণের ট্রল করা হয় এবং এটা করাকে যদি আপনি দেশ প্রেম ভাবেন তা মস্ত বড় ভুল ।
এখন তার মানে এই না যে ক্রিকেটারদের কোনো দায় নেই । যে দেশের মানুষ আপনাদের জন্য চেয়ে আছে হয়তো একটা রিকশাওয়ালা আজ কাজ করছে না যে সে বাংলাদেশের খেলা দেখবে, তাঁর আজ ইঙ্কাম নাই , আজ হয়তো এক ছাত্র তাঁর জমানো টাকা দিয়ে খেলা দেখতে এসেছে এসব মানুষদের আবেগের ভার টুকু ক্রিকেটারদের , এমনও হয়েছে যে মানুষ আপনাদের দেখে নিজের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা দেয় ।ক্রিকেটারদের মাঠ বা মাঠের বাইরের আচরণ মানুষ অনুকরণ করে। ফলে ক্রিকেটারদের দায় থেকেই যায়।
দিন শেষে এখন সাধারণ জনগণ হয়ত জায়গাগুলো আলাদা করবেন না । তবে একটাই কথা বলার মত থাকে দেশকে যেভাবেই হোক ভালোবাসেন।তবে তার জন্য ক্রিকেটকে বা অন্য খেলাকে উপলক্ষ করে সাপোর্ট না,সরাসরি দেশের জন্য না হোক নিজের জন্য হলেও সৎ পথে কাজ করে ।তাতে তেমন কিছু না হলেও নিজের উন্নতিটা হবে ও দেশের প্রতি আপনি আর যাই হন না কেন বোঝা হবেন না। কাউকেই খেলাতে কাকে সাপোর্ট করে তা দেখে বিচার করবেন না ।
অন্য দেশ যেমন ইংল্যান্ড বা স্পেনে মানুষ ক্লাবের খেলা গুলোতে তাদের দলকে সাপোর্ট করে কিন্তু তারা আপনার আমার মতোই খেলা পাগল হলেও ঠিক আমাদের মত এতোটা এক্সট্রিম ভাবে চিন্তা করেনা।তারা খেলা বা ক্লাবকে ভালবাসে কিন্তু তাঁর মানে এই না যে নিজের ভালটুকু ঠিকই দেখতে জানে না । আপনি কোনো কিছুকে নিয়ে আবেগটা আর সত্যিকার জিবনের বাস্তবতা দুইটার মাঝের ফারাক টুকু জানুন।
আর এখন এ প্রশ্নটার উত্তর আপনার কাছে ক্রিকেট কি আবেগ না দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবাদ?