পরতে পরতে ম্যাচের ভাগ্য পরিবর্তন- ক্রিকেটের সৌন্দর্য তো এখানেই। লো স্কোরিং ম্যাচও তাই উপভোগ করা যায়। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা সিরিজের ৩য় টি২০ ম্যাচের ভাগ্য শেষমেষ বাংলাদেশের দিকেই হেলে পরলো। সেই সাথে রচিত হলো ইতিহাস। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয়ের ইতিহাস! এ জয় যেন হার মানায় ২০০৫ সালে কার্ডিফে অজিদের বিপক্ষে ১ম ওয়ানডে জেতার রোমাঞ্চকেও।

বৃষ্টির হানায় ম্যাচ মাঠে গড়ানো নিয়েই শঙ্কার সৃষ্টি হয়। মিরপুরের মাঠের উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার ফলে ঘণ্টাখানেক দেরিতে হলেও ম্যাচ মাঠে গড়ায় এবং তা সম্পূর্ণ ২০ ওভারেই। সিরিজ বাঁচানোর লক্ষ্যে মাঠে নামা অজিদের শিবিরে ছিল ৩ পরিবর্তন। বিশ্রাম নেন তারকা পেসার মিচেল স্টার্ক৷ অভিষেক হয় পেসার নাথান ইলিসের, যিনি এই ম্যাচকে ঐতিহাসিক বানানোর আরেক কারিগরি। প্রথম বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি২০ তে অভিষেকেই হ্যাট্রিক করার কীর্তি গড়েন ইলিস। তবে সেই সাথে ছিলেন দলের সবথেকে খরুচে বোলারও! ৪ ওভারে ৩৪ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট নিলেও অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ বাঁচাতে তা পর্যাপ্ত ছিল না।

received 660447798330871 - ArenaHype
অভিষেকেই হ্যাট্রিক করা নাথান ইলিস

টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই অজি বোলারদের চাপের মুখে পরেন দুই ওপেনার। স্পিনিং উইকেটে এ ম্যাচে অজিরা সিরিজে প্রথমবার বোলিং ওপেন করে স্পিনার দিয়ে। সৌম্য সরকার এ নিয়ে টানা তিন ম্যাচে ব্যর্থ হন, ফলে লর্ড এসোসিয়েশনে যোগ দেওয়া যেনো এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

received 1087029381829042 - ArenaHype
টানা তিন ম্যাচে ব্যর্থ সৌম্য সরকার

৩ রানের মধ্যেই দুই ওপেনার হারানোর পর সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন। ৮ম ওভারে সাকিবের বিদায়ের (১৭ বলে ২৬) পর আবারো শঙ্কায় পরে টাইগারদের ইনিংস। তবে একপাশে আগলে রেখে দলের রান ১২৭ পর্যন্ত নিয়ে যান কাপ্তান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৫২ বলে ৫৩)। ইনিংসের শেষ তিন বলে মাহমুদউল্লাহ, মুস্তাফিজ ও মেহেদিকে আউট করে ১ম অভিষিক্ত বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি২০ তে হ্যাট্রিক করার গৌরব অর্জন করেন নাথান ইলিস।

জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ২য় ওভারে কাপ্তান ও ওপেনার ওয়েডের উইকেট হারালেও অজি ব্যাটিং ত্রাতা মিশেল মার্শের সাথে সিরিজে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা ওপেনার ম্যাকডারমট ৬৩ রানের জুটি গড়েন। ১২৮ রানের টার্গেটে ১৩.১ ওভারে ৭১/১ রান, পরিষ্কার হাতের মুঠোয় ম্যাচ অজিদের। জয়ের পথে থাকা অজিরা তখনও জানতো না সামনে তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে!

১৭ তম ওভারে মুস্তাফিজ মাত্র ১ রান দেওয়ায় একটু কঠিন সমীকরণেই পরে অজিরা। ১৮ তম ওভারে শরিফুলের বলে মিচেল মার্শের (৪৭ বলে ৫১) উইকেট পতনের পর যেন ম্যাচে প্রাণ ফিরে পায় টাইগাররা। তখনও জেতার জন্য অজিদের চাই ১৭ বলে ৩৪ রান। এরপর ১৯ তম ওভারে আবারো মুস্তাফিজের স্লোয়ার-কাটারে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ১ রান!

মেহেদির করা শেষ ওভারের রোমাঞ্চ তখনো বাকি। ৬ বলে ২২ রান। এমন উইকেটে অসম্ভবই প্রায়। কিন্তু ১ম বলে ৬ এবং ৪র্থ বল নো-বল হওয়ায় জেতার ক্ষীণ সম্ভাবনা তৈরি হয় অজিদের। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন উইকেটে থাকা ক্যারি ও ক্রিস্টিয়ান!

ফলাফল, ১০ রানে ৩য় টি২০ জিতে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোনো সিরিজ জিতলো টিম-টাইগারস! ম্যাচসেরা হন কাপ্তান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৪ ওভারে ৯ রান দিয়ে ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’ পুরস্কার জেতেন মুস্তাফিজুর রহমান।

IMG 20210807 012119 - ArenaHype
ম্যাচসেরা কাপ্তান মাহমুদউল্লাহ (tigercricket.com.bd)

তবে প্রশ্ন তো থেকেই যায়- ঘরের মাঠে উইকেটে এভাবে স্পিনিং-জুজু তৈরি করে হয়তো বড় মাছ ধরা যেতে পারে, কিন্তু বিদেশের মাটিতে এমন জৌলুশ দেখাতে আর কত অপেক্ষা!?