৩য় ও শেষ ওয়ানডেতে দুশমান্থা চামিরার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৯৭ রানের দাপুটে জয় পেয়ে বাংলাওয়াশের লজ্জা এড়ালো শ্রীলঙ্কা। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে ৫ উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হয়েছেন চামিরা।
মিরপুরে আলেশা মার্ট ওয়াল্টন লঙ্কা-বাংলা ওডিআই সিরিজের শেষ ম্যাচে প্রথমবারের টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে লঙ্কানরা। উদ্বোধনী জুটিতে ৮২ রানের শক্ত ভিত পায় সফরকারিরা। ওপেনার গুনাথিলাকা ৩৯(৩৩) রানে ফিরলেও ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ শতক তুলে নেন আরেক ওপেনার ক্যাপ্টেন কুশাল পেরেরা (১২২ বলে ১২০ রান)
আগের দুই ম্যাচের মতো এ ম্যাচে ব্যাটিং ধস রক্ষায় কুশাল পেরেরার সাথে কুশল মেন্ডিস(২২) ও ধানাঞ্জায়া ডি সিলভা(৫৫) যথাক্রমে ৬৯ ও ৬৫ রানের কার্যকর দুটি জুটি গড়েন। শেষ পর্যন্ত লঙ্কানদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ২৮৬ রান, যা মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে লড়াই করার জন্য বেশ ভালো পুজিই বলা চলে।
টাইগারদের পক্ষে এ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়ে আগের দুই ম্যাচের ব্যর্থতা কিছুটা হলেও ঢাকতে পেরেছেন তাসকিন আহমেদ। এছাড়া বোলিংয়ে ওপেন করা শরিফুল নেন ১ টি উইকেট।
পড়ন্ত বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে আগের দুই ম্যাচের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এ ম্যাচেও বাংলাদেশের টপঅর্ডার ধসে পরতে মোটেও বেশি সময় নেয় নি। লিটন দাসের জায়গায় ওপেনিংয়ে নামা মোহাম্মদ নাইম শেখ(১) কে দিয়ে বিপর্যয়ের শুরু, একে একে যোগ দেন সাকিব আল হাসান(৪) ও তামিম ইকবাল(১৭)। যদিও তামিমের উইকেটটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায় কেন হটস্পট ব্যবহার করে শতভাগ নিশ্চিত হলেন না থার্ড আম্পায়ার।
আগের দুই ম্যাচের ম্যাচসেরা মিস্টার ডিপেন্ডেবল(২৮) আশা দেখিয়েও ফিরে গেছেন। তবে ৫ নম্বরে দ্বিতীয় বার সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ক্যারিয়ারের ২য় ফিফটি তুলে নিলেও দলকে জেতাতে তা যথেষ্ট ছিল না। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ(৫৩) ও মোসাদ্দেকের(৫১) ফিফটি কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। পরপর তিন ওয়ানডেতে ডাক মেরে “অলরাউন্ডার” মেহেদি মিরাজ তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে (বিশেষ করে ওয়ানডেতে) ব্যাটিংয়ে অপরিপক্কতার প্রমাণ দিলেন আরো একবার।
তবে লঙ্কান পেসার দুশমান্থা চামিরা তার প্রাপ্য প্রশংসা টা পেতেই পারেন। ৬ ফুট লম্বা ও শুকনো গড়নের এই পেইস বোলার পুরো সিরিজেই স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছেন। প্রায় নিয়মিতভাবে বল করে গেছেন ঘণ্টায় ১৪০ কি.মি এর বেশি গতিতে। সাথে লাইন লেংথ আর সুইং এর কারসাজি তো ছিলই। বাউন্সারের সঙ্গে গুড লেংথের সুইং ডেলিভারিগুলো মিরপুরের উইকেটে তামিম সাকিবদের নাজেহাল করার জন্য ছিল যথেষ্ট। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো তুলে নেন ম্যাচে ৫ উইকেট (৯-১-১৬-৫)। সব মিলে সিরিজে তার উইকেট সংখ্যা ৯ টি।
এ ম্যাচে অভিষেক হয় তিন লঙ্কান বোলারের। অভিষিক্ত বাহাতি স্পিনার রামেশ মেন্ডিস ২ টি, অভিষিক্ত বাহাতি পেসার বিনুরা ফার্নেন্দো ১ টি করে উইকেট নিলেও আরেক অভিষিক্ত বোলার চামিকা করুনারাত্নে থাকেন উইকেটশুন্য ।
এছাড়া লেগি হাসারাঙ্গাও ২ টি উইকেট নেন।
ফলস্বরূপ ৯৭ রানের হার দিয়ে সিরিজ শেষ করলো স্বাগতিকরা। প্রথমবারের মতো লঙ্কানদের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতেলেও হোয়াইট ওয়াশ করার সুযোগ হাতছাড়া হলো। ম্যাচ শেষে তামিমের কণ্ঠেও ঝড়লো পয়েন্ট হারানোর আক্ষেপ, “প্রতিটি গেইম প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি জানেন না এই দশ পয়েন্ট আমাদেরকে ভবিষ্যতে কষ্ট দিতেও পারে। সুযোগ ছিল আমাদের পুরোটা শেষ করা উচিত ছিল।”
ম্যাচসেরা হন দুশমান্থা চামিরা তবে সিরিজসেরার পুরস্কার উঠে সিরিজের সর্বোচ্চ রান স্কোরার (৩ ম্যাচে মোট ৮৪+১২৫+২৮=২৩৭ রান) মুশফিকুর রহিমের হাতে।
ঘরের মাঠে টপঅর্ডারের ব্যাটিং ব্যর্থতা চিন্তার ভাজ ফেলেছে টাইগার শিবিরে। তবে তার চেয়েও বড় চিন্তার বিষয় ‘ব্যাটসম্যান’ সাকিবের অফ ফর্ম। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর এখন পর্যন্ত আহামরি কোনো ইনিংস আসে নি সাকিবের ব্যাট থেকে, তা সে নম্বর তিনেই হোক বা চারে, কিংবা আইপিএল অথবা দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে।