সৌদি আরবের পক্ষ থেকে এবারের ফিফার ভারচ্যুয়াল সম্মেলনে প্রস্তাব উঠিয়েছে দুই বছর পর পর যেন আয়োজন করা হয় বিশ্বকাপ ফুটবলের।সেই প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছে ১৬৬ টি দেশ।সাধারনত শুরুর পর ১৯৪২ এবং ১৯৪৬ বাদে প্রতি ৪ বছর পর পর বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ আসরের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

‘পরের বিশ্বকাপ আমার দলই নিবে দেখিস।‘এমন কথাগুলো সাধারনত বিশ্বকাপে কোন প্রিয় দল বাদ পড়লে কোনো এক পাঁড় ভক্তের মুখেই শোনা যায়।এমন চিত্র শুধু বাংলাদেশেই না পুরো বিশ্বে । হয়ত নিজের দেশ খেলছে না, তাতে কি আবেগ তো থাকেই ।

কোনো কিছু সম্পর্কে না জানা মানুষও ৪ বছর পর ঠিকই ঐ ব্রাজিল আর্জেন্টিনা নিয়ে বাঁ মেসি রোনালদো নেইমারকে নিয়ে মাতে। হয়ত দল গুলো বা এই খেলোয়াড়রা কেউই জানেন না এরা কারা,কিন্তু তাদেরকে নিয়ে মাতামাতি যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হয় এই আসরকে ঘিরে।

বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে টোকিয়ো অলিম্পিক,কোপা অ্যামেরিকা সহ প্রতিটি আসরের আয়োজন নিয়ে যেখানে শঙ্কা সেই পরিস্থিতিতেই গত ২১ জুন ফিফার ভারচ্যুয়াল সম্মেলনে ১৮৮ টি দেশের মধ্যে ১৬৬ টি দেশ এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।
এর আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ফিফা সভাপতি বিভিন্ন বিভিন্ন আসর গুলোর ফরমেট সিদ্ধান্ত নিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যে তিনি মেয়েদের ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য দুই বছর পর পর ২০২৩ সাল থেকেই বিশ্বকাপ আয়োজনের ঘোষণা দেন,ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ২৪ দল নিয়ে আয়োজন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন ও চলতি বছরে চীনে ২৪ দল নিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে এবং ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ ৪৮ দল নিয়ে আয়োজনের প্রস্তাবটিকে পাশ করাতে সমর্থ হন।যার ফলে প্রথম বারের মত ৪৮ দল নিয়ে আয়োজিত হবে বিশ্বকাপের কোনো আসর। তবে কিংবদন্তি পেলেসহ আরো অনেকে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

“আফ্রিকাতে ৫৪ টি দেশের মধ্যে পাঁচটিই বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে। আপনি যদি যোগ্যতা না অর্জন করেন তবে আপনি পরবর্তী চার বছরের জন্য কী করছেন? কিছুই না? ” -জিয়ান্নি ইনফান্তিনো
তবে বিশ্বব্যাপী প্লেয়ার্স ইউনিয়ন ফিফপ্রো এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।নতুন এবং বৃহত্তর প্রতিযোগিতা তৈরি করা সভাপতির মূল বিষয়, ফিফপ্রো খেলোয়াড়দের বার্নআউট এবং বড় কাজের চাপের কারণে আহত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে প্রতি দুই বছর পর পর বিশ্বকাপ মঞ্চ টুর্নামেন্টকে অবমূল্যায়ন করবে। এই মুহুর্তে, বিশ্বকাপটি একটি অন্যতম আকর্ষণীয় টুর্নামেন্ট, কারণ দলগুলি চার বছর ধরে এটির জন্য প্রস্তুত এবং অপেক্ষা করে। ১৯৯৯ সালেও যখন ব্লাটার এই প্রস্তাব করেছিলেন তখন এটি উদ্বেগের বিষয় ছিল। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ফুটবলার ববি চার্লটন বলেছিলেন , “এর জন্য অপেক্ষা করা এর মান বাড়ায় ।

আবার পুরুষদের বিশ্বকাপ এবং ইউরো দুটিই প্রতি দুই বছরে মঞ্চস্থ হতে পারে এমন ধারণা মার্চ মাসে উত্সাহিত করেছিলেন দুর্দান্ত আরসিনি ওয়েঙ্গারকে, যিনি এখন ফিফার বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের প্রধান।ওয়েঙ্গার এবং ডোমিংয়েজ উভয়ই এই যুক্তিটি ব্যবহার করেছিলেন যে খেলোয়াড়রা বিশ্বকাপে খেলার জন্য আরও বেশি সুযোগের প্রাপ্য।
এছাড়া অন্যান্য জনপ্রিয় আঞ্চলিক আসরগুলোর ( ইউরো বা কোপা অ্যামেরিকা)আয়োজন নিয়েও বাড়বে শঙ্কা। এছাড়া প্রীতি ম্যাচ গুলোর পরিবর্তে ইউয়েফা ন্যাশনস লিগ আয়োজন করে থাকে । এ ক্ষেত্রে এই আসর গুলোর নির্ধারিত সূচি নিয়েও যটের সৃষ্টি হবে। আকর্ষণ নিয়েও তৈরি হচ্ছে শঙ্কা।
তবে দিন শেষে ফিফার লাভের অঙ্কটা বিশাল। প্রতিটি বিশ্বকাপের সম্প্রচারের মাধ্যমে ফিফা প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার আয় করে। তাই যদি লাভের দিকে তাকানো হলে এত বিশাল অঙ্কের কারনে ফিফা চাইবেই ২ বছর পর পর বিশ্বকাপ আয়োজন করতে।সে ক্ষেত্রে হয়ত ফিফা আইসিসির পথেই হাঁটতে পারে।তবে বলে রাখা ভাল জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর বিরুদ্ধে অর্থকেলেঙ্কারির অভিযোগে তদন্ত চলছে। এর আগে সেপ ব্লাটারকে অর্থকেলেঙ্কারির অভিযোগে অভিযুক্তহয়ে পদত্যাগ করতে হয়েছিল যিনি নিজেও কিনা ১৯৯৯ সালে এরকম প্রস্তাব দিয়ে ছিলেন । এখন সব জল্পনা কল্পনার শেষে যদি বিশ্বকাপ আয়োজিত হয় ২ বছর পর পর তাতে আমেজ টুকু কত খানি থাকবে তাই হল প্রশ্ন?