দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার অসম্ভব যুদ্ধ জয় করে অবশেষে মাঠে ফিরলেন গ্যালাতেসারায় তারকা ওমর এলাবদেলাউই ।
“আমি দেখতে পাচ্ছি না, আমি দেখতে পাচ্ছি না,” ওমর এলাবদেলাউই ২০২০ সালের নববর্ষের প্রাক্কালে তার মুখে আতশবাজি বিস্ফোরণের পরে একজন বন্ধুকে চিৎকার করে বলেছিল। গানপাউডার এবং তরল ধাতু তার ত্বক ও চোখের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিল এবং তার জ্যাকেট জ্বলে উঠেছিল । তার স্ত্রী (অ্যানি) আগুন নেভাতে সাহায্য করতে দৌড়ে গেলেও ধ্বংসলীলা স্পষ্ট ছিল। এটি ছিল গ্যালাতাসারায় ডিফেন্ডারের পুনরুদ্ধারের একটি দীর্ঘ পথের সূচনা ।
“আমি শুধু ভেবেছিলাম আমার চোখে কিছু আছে এবং এটি পরিষ্কার করতে হবে কিন্তু তারপর আমি অনুভব করলাম আমার মুখ সম্পূর্ণ জ্বলছে এবং সবকিছু কালো হয়ে গেছে” এলাবদেলাউই স্মরণ করেন। তিনি বাগানে তার তিন সন্তান সহ বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে তৃতীয় আতশবাজি জ্বালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তিনি ফিউজ জ্বালানোর চেষ্টা করার সময় এটি অকালে নিভে যায় ও চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে । একটি অ্যাম্বুলেন্স কয়েক মিনিটের মধ্যে এসেছিল কিন্তু ইস্তাম্বুলের এরিয়া খুবই বড়। তাই হাসপাতালে পৌঁছতে অনেক সময় লেগেছে। এলাবদেলাউই আসার সময় , সাংবাদিক এবং সতীর্থরা অপেক্ষা করছিলেন – অ্যাম্বুলেন্সে তোলা তার খারাপভাবে পোড়া মুখের একটি ছবি পোস্ট করার পরে গল্পটি সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। “প্রথম দিনগুলিতে আমার হাতে কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না,সবকিছু অন্ধকার ছিল – আমি জানতাম না এটা রাত নাকি দিন। সময় অপ্রাসঙ্গিক ছিল ” নরওয়েজিয়ান ডিফেন্ডার উল্লেখ করেন ।
৩০ বছর বয়সী এই তারকা অলিম্পিয়াকোস থেকে সরে যাওয়ার পর কয়েক মাস ইস্তাম্বুলে ছিলেন । তিনি ইতিমধ্যেই স্কোয়াডের একজন জনপ্রিয় সদস্য ছিলেন। সতীর্থরা হাসপাতালে সময় কাটানো, সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিল । তৎকালীন কোচ ফাতিহ টেরিম তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য তার নববর্ষের উদযাপন ত্যাগ করেছিলেন । ইলাবদেলাউইয়ের মুখের ক্ষতির কারণে তার ভাই তাকে চিনতে পারেনি এবং হাসপাতালের মেঝেতে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন ।
এলাবদেলাউই বলেন ,”আমি মরিয়া হয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু এটা কঠিন ছিল,সমস্ত গানপাউডারের কারণে আমার মুখ পুড়ে গেছে। এক মুহুর্তের মধ্যে আমি ডাক্তারকে ধরে বললাম : ‘সত্যি বলুন, আমাকে বলুন এটা কতটা খারাপ।’ সে বলল: ‘আপনার বাম চোখ খুব খারাপ দেখায় না কিন্তু আপনার ডান চোখের ব্যাপারে আমরা জানি না।’ সে যেভাবে বলেছিল, আমি জানতাম এটা ভালো নয়। “
এটা স্পষ্ট ছিল যে এলাবদেলাউইকে তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা কোন সহজ কাজ ছিল না, ফুটবল খেলা তো আরো পরের কথা। টেম্পো স্পোর্টস গ্রুপের অ্যাডামপোওর এবং ক্লাবের ডাক্তার ইয়েনার ইনস তাকে সেরা সুযোগ দিতে চিকিৎসক খোঁজার জন্য প্রস্তুত হন। যুক্তরাজ্য থেকে চীন এবং কানাডা পর্যন্ত হাসপাতালে ব্যাপক গবেষণা এবং অনুসন্ধান করা হয়েছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে এলাবডেলাউই তার এজেন্টের সাথে সিনসিনাটি আই ইনস্টিটিউটে ডাঃ এডওয়ার্ড হল্যান্ড এর কাছে দেখাতে গিয়েছিলেন।
সিনসিনাটিতে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা এবং চেকআপের মধ্যে এলাবদেলাউই তার শুধু বাম চোখ দিয়ে দেখতে সক্ষম হয়েছিল । এছাড়াও তিনি ফিটনেস বজায় রাখার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
“এটি(প্রশিক্ষণ) আমাকে বাঁচিয়েছে, আমি মিথ্যা বলছি না,” এলাবদেলাউই বলেছেন। আরো বলেন “এটা ছাড়া আমি সারাটা পথ বাঁচতে পারতাম না – এটাই ছিল আমার আসল মুক্তি। আমি প্রথম দিকে প্রশিক্ষণ শুরু করেছি এবং আমি মনে রেখেছিলাম যে যাই হোক না কেন আমি খেলায় ফিরে যাব। “
অর্ধেক বছরেরও বেশি সময় পর পরিবারের কাছে যাওয়া ছিল রাইট ব্যাকের জন্য আরেকটি মাইলফলক। তাকে প্রতি আধঘণ্টা পর পর চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে হয়, জানুয়ারির শুরুতে তাকে দলে পুনঃএকত্রিত করা হয়েছিল, বিশেষজ্ঞ চশমা এবং একটি কন্টাক্ট লেন্স লাগানো হয়েছিল ।
এক বছরের মধ্যে প্রায় ১১টি অপারেশনের পর এলাবদেলাউই পুনরায় ক্যারিয়ারের দিকে তাকিয়েছেন । যাইহোক, অনেক অপারেশনের পর, রাইট-ব্যাক প্রতিকূলতাকে পরাজিত করে এবং সে খেলায় ফিরে আসার প্রথম ম্যাচে গ্যালাতাসারায় গোজটেপের বিরুদ্ধে ৩-২ ব্যবধানে জয়লাভ করে।