তীব্র তাপদাহ হতে সাধারণ মানুষকে প্রশান্তি দিতে সূর্য যখন বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক তখন ৯৩৭৩ কিলোমিটারের দূরের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার সুপার স্পোর্টসপার্ক ক্রিকেট স্টেডিয়াম এ স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের মাঠে কখনো জিততে না পারার কলংক মুছনের লক্ষ্যে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে টাইগার রা।

সর্বশেষ মুখোমুখি লড়াইয়ে জয় আত্নবিশ্বাসের পুজি দিলেও সেই ম্যাচটি ছিল নিরপেক্ষ ভেন্যু তে। তাই এক অর্থে এটি সাহস জোগালেও দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠের অতীত এর ফলাফল যেনো দেখায় শুধু ভয় ই। ২০১৯ এর সাথে বর্তমান টিমের তুলনা করলে অভিজ্ঞতায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও বর্তমান টিম পারফর্ম্যান্স এর দিক থেকে ঢের এগিয়ে। কিন্তু ২০১৯ এর জয়ে পারফরম্যান্সে নেতৃত্ব দেওয়া সাকিব আল হাসান যেনো ২০২২ এসে নিজেকে হারিয়ে খুজছেন। একের পর এক সমালোচনা আইপিএলে দল না পাওয়া ব্যাট হাতে একের পর এক ব্যর্থতায় নিজেকে হারিয়ে খুজছিলেন। মানসিক ও শারীরিক অবস্থা এমনই অবস্থায় পৌছেছিলো যে চেয়ে বসেছিলেন সাময়িক ছুটি ও। শেষ পর্যন্ত বোর্ড প্রেসিডেন্টের ইচ্ছার জোরে হলেও দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে এসেছেন। তাই ব্যাট হাতে অফ ফর্মে থেকেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন সাকিব। 

সাকিব ইস্যুর সাথে মাশরাফির আগের রাতের মন্তব্যে প্রায় সবমিলিয়ে এলোমেলো এক অবস্থাতেই খেলতে নামে টাইগার রা। টস জিতে স্বাগতিকরা ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশকে। অনেকটা দেখে শুনে ধীরলয়েই শুরু করে অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও সুপ্রিম টাচে থাকা লিটন দাস। দেখেশুনে খেলতে থাকা লিটন দাস ও তামিম মিলে প্রথম ১৬ ওভারে মাত্র ৫৩ তুলতে সমর্থ হলেও পরবর্তী ৩৩ বলে ৪২ রান তুলে ফেলে এই দুইজন মিলে। দলীয় ৯৫ রানে ৬৭ বলে ৪১ করে প্রথম উইকেটের শিকার হন তামিম ইকবাল। সাকিব এসে তার রানের খাতা খুলেন ৪ মেরে। অন্যদিকে ৬৬ বলে ৫০ তুলে বড় ইনিংসের আশা দেখাচ্ছিলেন লিটন দাস ও। কিন্তু দারুণ টাচে থাকা লিটন দাসকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান কেশব মহারাজ। এরপর খুব স্বল্প ব্যবধানেই মুশফিক ৯ করে আউট হয়ে গেলে শংকা জাগে ব্যাটিং কলাপ্সের। কিন্তু দিনটি ছিলো সাকিব আল হাসান এর। ইয়াসির আলী কে সংগে নিয়ে ১১৫ রানের জুটি গড়ে তুলেন। লং অফ আর লং অন এর উপর দিয়ে মারা ছক্কা গুলো যেন বারবার বলে যাচ্ছিল সাকিবকে ভালোবাসা যায় ঘৃণা করা যায় কিন্তু বিষয় টা যখন তখন ক্রিকেট তাকে এড়িয়ে চলা অসম্ভব। দারুণ খেলতে থাকা সাকিব ৬৪ বলে ৭৭ করে স্কুপ করতে গিয়ে এব্লিডব্লিউ আউটের শিকার হন।  

ojlIPJS4J2Bhc6lzK zHqSlBdZcotRXXmMUYtRie9YviUtE5fFs Ed951ksnwhFvtGzq3MZKbf3Q QPZmf7WJpnAdPDjf8n IbLTS7gTZ 2DAH1sBQ8g7NieWQl8Pstus6OHKQZk - ArenaHype

অন্যদিকে সাকিব আউট হয়ে গেলেও ইয়াসির আলী তুলে নেন নিজের প্রথম ফিফটি। রাবাদার বলে ইয়াসির আলীর ফ্লিক শট টি যেনো ছিলো পুরা ম্যাচেরই ট্রেডমার্ক শট। লিটন দাসের মতো তিনিও ৫০ রানের ঘরেই সাজঘরে ফিরেন। ২৪৩ রানে ৫ উইকেট পড়ে গেলে জুটি বাধেন রিয়াদ এবং আফিফ। আফিফ করেন ১৩ বলে ১৭ রান ও অন্যদিকে রিয়াদ করেন ১৭ বলে ২৫ রান। রিয়াদ দলীয় ২৮৮ রানে আউট হয়ে গেলে বাকি থাকা ১৩ বলে সম্মিলিত ভাবে ২৬ রান তুলে তাসকিন ও মিরাজ এবং দলকে এনে দেয় ৩১৪ রানের পুজি।

FkZv6EimHf5UiiomdOlnbxx1BkS0waP6W BkkB4dPmjD568dwYVeJbF4Qg5iizcD7RNqMc2GmNQ9uQ29KspW2wP1M5qGrWnNl24 eKe7AUC9QW9 - ArenaHype

৩১৪ রানের পুজি নিয়েও শংকা ছিলো ম্যাচ জয় নিয়ে। সেই শংকা প্রথম ১০ ওভারেই অনেকটা দূর করে দেন দারুণ ছন্দে থাকা তাসকিন ও শরীফুল। ১৮ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম উইকেট তুলে নেন শরীফুল এবং অন্যদিকে তাসকিন একই ওভারে দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ সম্পূর্ণ বাংলাদেশের পক্ষে নিয়ে আসেন।

aW01fJIfqgs E QHVC 0f5k NbyLuTakxDN8uqO8Mi0JuL2oxC 2KW273jrK ZZ6Ke8Aski3jgkdXtGrKRWF00r2M0mnSfPFjhyQlUIVuO4x0Ic5C7 - ArenaHype
UmmX3s22Oe0Zs f24hP5yO FGtCF6lIUN5oM6JUGuVNWKF6aQi4zgisqh7He8cmUEsmcqHRw0pviGkrbngEJVKXB5fgdZUoSjUS9 U79nU4Z5bQ1MyoEbhmDDcsqqBselcrfFGK9 - ArenaHype

 ৩৬ রানে ৩ উইকেট পড়ে গেলেও ভ্যান ডার ডুসান আর বাভুমা মিলে গড়ে তুলেন প্রতিরোধ। এর আগে কখনোই নিজের মাটিতে ওডিয়াই এর সেকেন্ড ইনিংসে আউট না হওয়া ভ্যান ডার ডুসান হতে শুরু করেন অপ্রতিরোধ্য অন্যদিকে বাভুমা দিচ্ছিলেন যোগ্য সংগ। কিন্তু দিনটা যে বাংলাদেশের তাই অসাধারণ ক্যাপ্টেন্সির প্রদর্শন করে শরীফুল কে নিয়ে আসেন তামিম এবং শরীফুল তুলে নেন বাভুমাকে সাথে ভেংগে দেন তাদের গড়ে তোলা ৮৫ রানের জুটি। বাভুমা ফিরে গেলেও মিলার আর ভ্যান ডার ডুসান মিলে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই চালাচ্ছিলেন। তাদের দুইজনের ৭০ রানের জুটিতে আস্তে আস্তে বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচটাও বের হয়ে যাচ্ছিলো।

UoYQ4K6Wmq2Qe1Wh4la9c Ox4Wen8n5kxKb7eOl4PJFwftoOeV vxwz3H 9WiEezyKIx3 - ArenaHype

Image Source : Cricket South Africa 

ঠিক তখনই আরো একবার অসাধারণ বোলিং চেঞ্জে বল করতে আসেন দিনের সেরা বোলার তাসকিন আহমেদ। প্রথম বলেই এনে দেন ব্রেক থ্রু! তাসকিনের বলে ইয়াসির ধরেন এক অসাধারণ ক্যাচ এবং ভ্যান ডার ডুসান সাজঘর ফিরে যান ৯৮ বলে ৮৬ রান করে। 

yEJN CmC8K5uLevMyw0Hx1PlUnQixpCqJbt4ecuAcBfqEB4 r - ArenaHype

ভ্যান ডার ডুসান ফেরত গেলেও মিলার চেষ্টা করে যান বিশাল এই লক্ষ্যকে তাড়া করতে। শেষ পর্যন্ত মিরাজের বলে মুশফিকের কাছে স্ট্যাম্পড হয়ে ৫৯ বলে ৭৩ রানে ফিরেন সাজঘরে।

myf OPjaI6rBY5QScGDCedAMIZtlRSk0oa5CL9U IfXofNRk2jE4GGteAEkFFVGlLUZrn0OEpzCRvGRb50NiUDuZptI WxC5PdaRErK QrDSkTGBKRkLjUgmwxC jmZwCRs3 mgN - ArenaHype

 এরপর কেশব মহারাজ চেষ্টা করলেও ম্যাচের বাকি অংশ কার্যত ছিলো নিয়ম রক্ষা। রিয়াদ কেশব মহারাজকে ২৩ রানে ফেরালে বাংলাদেশ পায় ৩৮ রানের এক ঐতিহাসিক জয়।

প্রথম ৪ ওভারে প্রায় ৪০ রান দেওয়া মিরাজ দারূণ ভাবে ব্যাক করেন তার দ্বিতীয় স্পেলে। মিলার এর উইকেট সহ ৪ উইকেট পাওয়া মিরাজ দলের সেরা বোলার হলেও বল হাতে গেম চেঞ্জার ছিলেন তাসকিন। ১০ ওভারের বোলিং এ ৪০ টি ডট বল দেওয়ার পাশাপাশি ৩ উইকেট তুলেন যার মধ্যে ছিলো ভ্যান ডার ডুসান ও মার্কারেমের উইকেট টি। আরেক পেসার শরীফুল ও ছিলেন অসাধারণ। অন্যদিকে পুরো ম্যাচ জুড়ে তামিমও করে গেছেন অসাধারণ এগ্রেসিভ ক্যাপ্টেন্সি। অবশ্য ম্যাচ শেষে সবাইকে ছাপিয়ে ম্যান অব দ্যা ম্যাচের পুরষ্কার পান সাকিব আল হাসান। তামিম, তাসকিন, মিরাজ, ইয়াসির, শরীফুল, লিটন দাসদের ম্যাচ জয়ে অবদান থাকলেও বাংলাদেশ ও দেশের হাজারো ক্রিকেটপ্রেমী সম্ভবত সবচেয়ে বড় স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়বে সাকিবের ড্রাইভিং সিটে ফেরত আসায়।