গতকাল একই দিনে দুইটা ম্যাচ হওয়ায় খুব সহজেই একটা কম্প্যারিসন দাড় করানো যায়। আর অন্য কোন ক্লাবের সঙ্গে তুলনা না দিয়ে আমাদের নিজেদের সঙ্গেই নিজেদের তুলনা দিলে বুঝতে পারবে আমরা কতটা পথভ্রষ্ট। ইয়ুথ টিমের ম্যাচে বার্সা রীতিমতো বায়ার্নকে পাত্তা দেয়নি। এমন না ভুড়ি ভুড়ি গোল হয়েছে। কিন্তু ২০ টা শট! ৮ টা ব্লক, ৮ টা অন টার্গেট, ৪ টা অফ টার্গেট। এগুলা স্ট্যাটস, এখান থেকে কিছুই বুঝা যাবে না খেলার আদ্যোপান্ত। ৮৩ মিনিট এর সময় ৬৩% পজেশন বার্সার দখলে। এই পজেশন রাখার জন্য গেম টেম্পো কতটা সুন্দরভাবে কন্ট্রোল করেছিল বলে বুঝানো সম্ভব না। বায়ার্নের ইয়ুথ প্লেয়াররা মেইন টিমের প্লেয়ারদের মতো বেশ মাস্কিউলার এবং এনার্জেটিক। তাদের প্রেস এবং চার্জ রীতিমতো বৃথা বার্সার পজেশন হোল্ডিং এর এগেইন্সটে। বার্সার শুকনা শুকনা বাচ্চাগুলা বায়ার্নের পায়ে বল যেতে না যেতে ৩ ডাইমেনশনে চার্জ করে মুহুর্তেই বল রিট্রিভ করে নেয়। আর ৩ ডাইমেনশনে চার্জ করার মতো এনাফ প্লেয়ার কাছে না থাকলে বডি চার্জ এমনকি ফাউল করে বসে যাতে করে খেলা স্লো হয়ে যায়, কোনভাবে কাউন্টার যাতে না দিতে পারে বায়ার্ন। কোন ভাবেই বায়ার্নকে গেম টেম্পো কন্ট্রোল করতে দেয়নি। একটা দল ২০ টা শট এটেম্পট নিয়েছে আবার সেই দলই ১৬ টা ফাউল করসে।
এনি আইডিয়া হাও দে স্টপড বায়ার্ন ফ্রম প্লেইং দা গেম? অন দা বলে ইয়ুথ টিমের পোলাপান এত কামলি বল হোল্ড, পাস, প্রোগ্রেস করসে দেখে মনে হচ্ছিল মাঠে ২০০৯ এর জাভি, মেসি, ইনিয়েস্তাদের ছেড়ে দেয়া হইসে আর এরা এখন মাঠ মাতাচ্ছে। রীতিমতো এক্সিলেন্ট ভিশন। একেকটা প্লেয়ারের মুভমেন্ট এত সুন্দর যে পাসিং অপশন কখনোই ব্লক হয় না। কোন না কোন এঙ্গেলে একাধিক পাসিং অপশন ওপেন থাকে। আর বিল্ডাপের সময় দুই ফুলব্যাক উপরে উঠে মাঠ স্ট্রেচ করে আর ডিএম নিচে দুই সিবির মাঝে নেমে ৩ ম্যান ডিফেন্স লাইন ক্রিয়েট করে বল মিডফিল্ড লাইন এর উপরে প্রোগ্রেস করে। এত সুন্দর অর্গানাইজড খেলা বার্সার মেইন টিমে দেখা যায় না এখন। বড়দের খেলার সঙ্গে কোন ভাবেই সাদৃশ্যপূর্ণ এই ছোটদের খেলা? অথচ আমরা কিন্তু ছোটদের এই খেলার ধরণ বড়দের মাধ্যমে ইমপ্লিমেন্ট করতে দেখে এই পর্যন্ত এসেছি। ছোটদের এই খেল বড়রা একসময় খেলতো দেখেই আমরা উপভোগ করতাম তাদের খেলা। একটা উঠতি চারাগাছকে বড় হওয়ার সময় একটা কাঠি দিয়ে সোজা করে দাড় করিয়ে দিলে অই গাছ এর কখনো বাঁকা হয় না। লা মাসিয়ার একেকটা ছেলে ১২-১৩ বছর থেকে একটা সিস্টেমে বড় হয়ে আসছে। একটা সিস্টেম না, বার্সার সিস্টেম, সুপিরিয়র একটা ফিলোসোফির ইমপ্লিমেন্টেশনকে ফলো করে আসছে। এখন এই প্লেয়ারগুলো যদি এখানে শাইন করতে না পারে বা শাইন করার সুযোগ না পায়, তখন এরা বাইরে গিয়ে খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকে না। কারণ আমাদের যে সিস্টেম তা অনেক বেশি ইউনিক। আবার বাইরে থেকে আমরা যে প্লেয়ার আনি, তারা যে সিস্টেমে গ্রো করেছে, তারা এসেও আমাদের সিস্টেম এডাপ্ট করে নিতে পারে না। কৌতিনহো ডেম্বেলেদের মতো হিউজ পটেনশিয়ালের ইয়াংস্টারদের অবস্থা আজ কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। তাহলে এতকিছুর পরও কেন আমরা লা মাসিয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছিনা? একাডেমির বেস্ট ক্যাডেট যদি টিমের মেইন ইলেভেনে সিলেক্ট হতে খাবি খায়, তাহলে অন্য ক্লাবের এভারেজ প্লেয়ারদের জায়গা কি আমাদের বেঞ্চেও আছে? একাডেমি থেকে প্রতি ২-৩ বছরে প্রতি পজিশনে একটা করে প্লেয়ার ডেভেলপ হয়। সেন্টারব্যাকে আমাদের একাডেমির ৩ টা প্লেয়ার এখন মেইন টিমে।
এদের গ্রো করার সুযোগ না দিয়ে কেন এখনো পিকে-লংলে? রাইট ব্যাকে এমারসনকে কেন ছেড়ে দিল যখন ডেস্টের নিজের ফর্মও আশানুরূপ না? অসুস্থ আলবা কেন ৭৪ মিনিট পর্যন্ত খেলল যখন একাডেমির প্লেয়ার বেঞ্চে বসে আছে? আমাদের যে সিস্টেম, তা থেকে আমরা ধীরে ধীরে অনেকটা সরে এসেছি। আগে আমাদের সিস্টেমে টার্গেটম্যানকে দিয়েই গোল দেওয়াতে হবে এরকমটা ছিল না। কিন্তু মেসি থাকাকালীন গত ২ সিজনে বেশ বাজেভাবে চোখে লাগে এই বিষয়টা। শট এটেম্পট না নিয়ে মেসিকে খুজে গোল দেওয়ানোর জন্য। এই বিষয়টা এখন প্যারাসাইট হয়ে গেসে। আগে ইতো, সুয়ারেজ গোল দিতো, ওরা অকুপাইড থাকলে হেনরি, নেইমার গোল দিত, ওরা অকুপাইড থাকলে মেসি গোল দিত। এই তিন পজিশনই অকুপাইড থাকলে জাভি, ইনিয়েস্তা, রাকিটিচ গোল দিত। টিমে এতগুলো গোলস্কোরার থাকলে ইউসিএল এর ইতিহাসে জিরো অন টার্গেট শট কোনদিনও দেখতে হতো না। লুক ডি অং এর মতো সাইনিং কেন হয় ধারণা নেই কোন। বার্সাকে খুজে পেতে হলে বার্সার দিকেই ফিরে তাকাতে হবে। সারা বিশ্বে হাতড়ে খুজে ফিরলেও বার্সাকে খুজে পাওয়া যাবে না। লা মাসিয়া আমাদের মূল, এখানেই আমাদের সব সমস্যার সমাধান খুজতে হবে। নয়তো কিছু জেম আছে আমাদের কাছে যারা আর আমাদের মাঝে থাকবেনা।