২২ গজে ব্রায়ান লারার মতো ব্যাটিং জিনিয়াসের বিচরণই হয়তো ক্রিকেটকে গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ বলার সার্থকতা। লারা তার অনবদ্য ক্যারিয়ারে রেকর্ড ভাঙা-গড়াকে পরিনত করেছিলেন স্বভাবে, তাই কেউ কেউ তাকে বলেন রেকর্ডের বরপুত্র। দীর্ঘ ১৪ বছর আগে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের রাজপুত্র লারা তার ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানলে ও এক পায়ে ভর দিয়ে খেলা তার পুল শটগুলো আজো পুলকিত করে ক্রিকেট ভক্তদের।

লারা খেলেছিলেন রাজার মতো। ব্যাট হাতে তার নান্দনিকতা, শৈল্পিকতা কিংবা বোলারের বিপরীতে তার নির্লিপ্ততা তাকে করেছে অসাধারণ। নব্বই এর দশকের শুরুতেই ভিভ রিচার্ডস দের বিদায়  আধুনিক ক্রিকেটে উইন্ডিজের  সোনালি সময়ের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছিল। দশকের সূচনাকালে একঝাক মহাতারকার বিদায়ে শুধু উইন্ডিজ নয় পুরো ক্রিকেট দুনিয়া হনো হয়েছিল নতুন কোন এক সুর্যের। যার আলোয় পথ খুজে পাবে ক্রিকেটের প্রতি অগাধ ভালোবাসা।  এমনই এক যুগের সন্দিক্ষনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন লারা। 

ব্রায়ান লারাকে অনেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিংবদন্তী দের যোগ্য উত্তরসুরি হিসেবেই কল্পনা করছিলেন, তবে ভিভ রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েড, গর্ডন গ্রিনিজ দের দেখে বড় হওয়া একটা জাতির প্রত্যাশা মেটানো শুধু কঠিন নয় দুঃসাধ্য বটে। কিন্তু ব্রায়ান লারা ছিলেন অসাধারণ, প্রত্যাশার চাপে তিনি কখনোই নুইয়ে পড়েননি।

তিনি আলোকিত হয়েছেন আপন আলোয় ক্রিকেট কে উপহার দিয়েছেন একের পর এক মহাকাব্যিক ইনিংস। অভিষেকে আলো ছড়াতে না পারলেও বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই লম্বা ইনিংস খেলতে পারদর্শী লারা নিজেকে মেলে ধরতে তেমন সময় নেননি। নিজের পঞ্ছম টেস্টে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির ইনিংসকেই পরিণত করেছেন ২৭৭ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসে। সেই যে শুরু তারপরে লিখে গেছেন শুধুই ইতিহাস ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডে বিপক্ষে করা ৪০০ রানের ইনিংস আজো সকলের কাছে পর্বতসম। এই ইনিংসটি ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস হিসেবে টিকে আছে প্রায় ১৭ বছর নিকট ভবিষ্যতে আর কেউ সে চুড়া ধরতে পারবেন কিনা সময়েই বলে দিবে।

তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ছিল বহু সমলোচনা-সন্দেহ কিন্তু যারা ঘুরে বেড়ায় নান্দনিকতার খোজে তাদের নিকট লারা অনবদ্য। যারা খেলার সৌন্দর্য বুঝেন তাদের জন্য তিনি ছিলেন আশীর্বাদ। ক্রিকেট কিংবদন্তিরা যখন বলেন লারাকে দেখার জন্যে আরো একবার মুল্য চুকাতে চায়, সেটাই প্রমান করে  লারার অসাধারণত্ব। 

ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট এর রোমাঞ্চ ছিল ভিন্ন, ক্রিকেটের প্রতি তাদের ভালোবাসাটা ছিল অন্তরের গহীন হতে। এই ভালোবাসায় কে কি বলে তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। ম্যাচে ভরাডুবি কিংবা হার উইন্ডিজ দের আপনি কখনোই কাঁদতে দেখবেন না।  কিন্তু এর বাইরে তাদের ক্রিকেটের আছে আরো একটি অংশ যেখানে নেই কোন দয়ামায়া তারা যখন মাঠে নামে  কেউ হয় সম্ভ্রস্ত আর কেউবা মন্ত্রমুগ্ধ। এইসব গুনই লারা নিজের মধ্যে ধারন করে গড়েছেন এক অসামান্য ক্যারিয়ার। 

তার স্কয়ার কাট এবং পুল শটের সৌন্দর্য ছিল বর্ণনাতীত। তিনি তার দিনে দুনিয়ার সেরা বোলার কে ও নামিয়ে আনতেন মাঠিতে। লারার দিনে যে কেউ করতে পারেন তার জীবনের সেরা বল কিন্তু লারা তা  অনায়াসে করবেন বাউন্ডারি ছাড়া এই ছিল নিয়ম। বোলারের প্রতি তার ছিল নির্দয় রাজার মতো একরাশ নির্মমতা। 

ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে ব্যাট হাতে সুবিধে করতে পারেননি, অধিনায়কত্ব এবং ক্যারিয়ারের ও ইতি টেনেছেন ১ রানের পরাজয়ের আক্ষেপ নিয়েই। তবে বের হওয়ার পথে দর্শকদের দিকে একটা প্রশ্ন করেছিলেন ব্রায়ান লারা, ‘ডিড আই এন্টারটেইন? উত্তরটা সবারই জানা। পুরো ক্যারিয়ারে সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানো লারা থেমেছিলেন সফল ক্যারিয়ার রেখেই।