২০১৮-১৯ মৌসুমের পর আবারো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে দেখা গেল দুই ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানসিটি আর চেলসির শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই । এর আগে ২০১৮-১৯ মৌসুমে লিভারপুল বার্সা ফ্যানদের কাঁদিয়ে উঠেছিল ফাইনালে। অন্যদিকে আয়াক্সের স্বপ্নের মত কাটতে থাকা মৌসুমের যাত্রাকে ভঙ্গ করে প্রথম বারের মত ফাইনালে উঠেছিল টটেনহাম।শেষ পর্যন্ত লিভারপুলের কাছে হারের মাধ্যমে শেষ হয় তাদের স্বপ্ন এবং লিভারপুল ২০০৪-০৫ মৌসুমের পর প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করে নেয়।


এই মৌসুমে প্রথম বারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছিল ম্যানসিটি ।হট ফেবারেট হিসেবেই মাঠে চেলসির বিপক্ষে নেমেছিল গার্দিওলার দল । তবে গোটা মৌসুম ধরে ম্যানচেস্টার সিটি যেমন দুর্দমনীয় ফুটবল খেলছিল, অনেকেই ভেবেছিলেন, এক দশক পর আবারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতবেন পেপ গার্দিওলা।সিটিকে দেবেন তাঁদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরোপসেরা হওয়ার আনন্দ ।কিন্তু সে আশাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ট্মাস টুখেলের চেলসি জিতে নিল ২০১২ এর পর ২য় চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। পোর্তোর দ্রাগাও স্টেডিয়ামে আজ ’অল ইংলিশ ফাইনালে’ চিলওয়ালের মাঝমাঠ হতে যোগান দেয়া বলকে কাইল হাভার্টজ পড়ায় একক প্রচেষ্টায় ৪২ মিনিটে জয়সূচক গোলটি করেন।

মাউন্টের পাস থেকেই এসেছে হাভার্টজের এই গোল।
ছবিঃরয়টার্স

সেই গোলটিই হয়ে যায় পুরো মৌসুম জুড়ে উড়তে থাকা ম্যান সিটির কাল আর চেলসির উৎযাপনের কারন। এরপর ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেও ট্মাস টুখেলের দলকে গোল হযম করাতে পারে নি ম্যান সিটি । ম্যাচের ১০ মিনিটেই চেলসি পেয়েছিল দারুন এক সুযোগ অন্যদিকে ম্যান সিটির ফোডেন ২৭ মিনিটে সুযোগ নষ্ট করেন । ৬৮ মিনিটে আসপিলিকেতা মাহরেজের ক্রসকে ব্যর্থ না করে দিলে ফল অন্যরকম হতে পারত। ৯০ মিনিটে দিয়াজের ক্রস চেলসি বক্সে সবাইকেই এড়িয়ে যায়, এরপর মাহরেজ আবার ক্রস করেন বক্সে, কিন্তু ক্রসটা ফোডেনের কাছে যাওয়ার আগেই চেলসি ডিফেন্ডাররা সেটি ফিরিয়ে দেন। এরপর যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে মাহরেজ আবার সিটিকে সমতায় ফেরানোর দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর শট চলে যায় বার উঁচিয়ে।

শেষ বাঁশি বাজতেই চেলসি কোচ টমাস টুখেলের উচ্ছ্বাস।
শেষ বাঁশির সাথে সাথেই টুখেলের উল্লাস ।ছবিঃটুইটার


প্রায় কয়েক বিলিয়ন দলার গত কয়েক বছরে খরচ করেছিলেন পেপ গার্দিওলা ম্যানসিটিতে কোচ হিসেবে আসার পর থেকেই । শেখ মানসুরের পেট্রো ডলারের ঝনঝনানিতে ম্যানসিটি ধীরে ধীরে হয়ে উঠে ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাব । তাতে আগুয়েরোর কিংবা ভিন্সেন্ট কম্পানিদের অবদান ও ছিল বলার মত। দিন শেষে আগুয়েরোর আক্ষেপ একটাই যে ক্লাবটিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতাতে না পারা । কিন্তু চেলসিও যে খরচ করেনি তেমন নয় । তারা মাঝে অতিরিক্ত খরেচের দায়ে ইউয়েফা থেকে পেয়ে ছিল নিষেধাজ্ঞা। ম্যানসিটির হার মনে করিয়ে দেয় গত বছরের পিএসজি এর কথা । শেখ নাসেরর পেট্রোডলারের জোরে ট্মাস টুখেল সেবার শক্তিশালী দল নিয়েও বায়ার্ন নামক দানবের কাছে হার মেনেছিল। পরে সেই টমাস টুখেলই চেলসিকে এনে দিল তাদের ২য় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। আর এরই মাধ্যমে আবার অই অর্থে পরাজয় ঘটল ফুটবলের কাছে । ঠিক কতদিন আর এমনভাবে অর্থের প্রভাবকে ঠেকিয়ে রাখবে ফুটবলের সৌন্দর্য সেইটাই প্রশ্ন।

টুখেলের চেলসির কাছে টানা তিন ম্যাচ হেরেছে গার্দিওলার দল।
টুখেলের চেলসির কাছে টানা তিন ম্যাচ হারের পর গার্দিওলা।
ছবি: রয়টার্স

তবে করোনা মহামারির ভিতরই দর্শক উপস্থিতিতে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। পয়সা খরচ করে যারা দেখতে গিয়েছিল সম্পূর্ণ পয়সাই তাদের উসুল হয়ে গিয়েছে ম্যাচটিতে। আর চেলসিও পেল আবারও দর্শকের সামনে উৎযাপন করার সু্যোগ।
তবে পেপ গার্দিওলার শুরুর একাদশে ছিলেন না রদ্রি, ফার্নানদিনিও, জোয়াও কানসেলোর কেউ। অতিরিক্ত আক্রমণনির্ভর খেলোয়াড় দিয়ে দল সাজিয়েছেন। যার ফলে ম্যাচ শেষে তা নিয়ে সমালোচনার মুখেই পড়েছেন এই সাবেক কাতালান কোচ।