শতাব্দী প্রাচীন এই দ্বৈরথের বহু কালো অধ্যায় থাকলে ও কোটি ফুটবল ভক্ত টিভি সেটের সামনে বসে আগামীকাল শুধু সৌন্দর্য টাই উপভোগ করতে চাইবেন। সেই সাথে মাঠের বাইরে সৌন্দর্য টা বজায় রাখা আমাদের দায়িত্ব।

এ কোন যুদ্ধ নয় শুধুই একটি ফুটবল ম্যাচ। কিন্তু উত্তেজনা কী কোন অংশে কম!! রাত পেরুলেই মহারণ। বহু ইতিহাসের সাক্ষী মারাকানা স্টেডিয়াম প্রস্তুত শতাব্দী প্রাচীন এই দ্বৈরথের সফল অনুষ্ঠানে।

কিছু তর্ক-বিতর্ক থাকে অফুরন্ত, কিছু বৈপরীত্য থাকে যা কখনোই মেলার নয়, কিছু ভালোবাসা থাকে যা একান্তই নিজের- সেখানে সমঝোতা অসম্ভব। ক্যানভাসে শিল্পীর রং- তুলিতে হলুদ আকাশী নীল হতে পারে কিন্তু কিছু হলুদ কখনোই আকাশি-সাদা হয় না, আর আকাশি-সাদাও ভুল করে হলুদে রাঙায় না। মেরু চাইলেই মরু হতে পারে না। তেমনি ফুটবলের দুনিয়ায় ও ভিন্ন কক্ষপথ বেছে নিয়েছে যে দুটি দল, সেই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফাইনালে কেনই বা রণ সমতুল্য আবেগের কমতি থাকবে।

ক্যালেন্ডার এর পাতায় হয়তো পূর্বের রবিবারের সহিত আগামী রবিবারের কোন পার্থক্য নেই। তবে রবির সকালে উদিত সূর্য যে ফুটবলের ইতিহাসে আরও একটি পালক নিয়ে আসতে চলছে , তা এতক্ষণে জেনে গেছে সবাই। বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মাঝে নব্বই কিংবা আরো বেশি সময়ের জন্য হাজির হচ্ছে ‘সুপার ক্ল্যাসিকো দি লাস আমেরিকাস’।

চৌদ্দ বছর এর দীর্ঘ বিরতি শেষে আবারও দুই লাতিন প্রতিবেশী কোপার ফাইনালে মুখোমুখি। শুধু কোপা নয় এই দীর্ঘ সময়ে কোন ফাইনালেই মুখোমুখী হয় নি এই দুই দল।

লর্ডস ক্রিকেটের মক্কা হলে মারাকানা কে ও বলা চলে ফুটবলের মক্কা। বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই স্টেডিয়াম- ই ২০১৪র বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে কদিয়েছিল মেসির আর্জেন্টিনাকে। আবার এই পয়া মারাকানা ব্রাজিলের হাতে তুলে দিয়েছে ২০১৯ এর কোপা শিরোপা। রাত পেরুলেই বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হতে চলছে এই মহারণ।

কে জিতবে এই ঐতিহ্যের লড়াই। কে জিতবে শতাব্দী প্রাচীন এই টুর্নামেন্টের মুকুট। নিজ দলের জন্য হয়তো সকল সমর্থকই নিজ ধর্মাচার অনুযায়ী সেরে নিয়েছেন প্রার্থনা। এই মহালড়াই এর মহাসৈনিক পেলে এখনও নিরব টুইটারে যদিও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়ে বসে আছেন তার দেশ জিতবে ৫-০ ব্যবধানে। এই কথার ফাঁকে মনে এসেছিল দিয়োগো আর্মান্ডো ম্যারাডোনা র কথা। কেনই বা হবে না মনে, তিনি থাকলে যে মাঠের বাইরে ও হতো আরেকটি যুদ্ধ। ফুটবলের এই মহানায়ক হয়তো আর নেই তবে তার আত্মা নিশ্চয়ই ওপাড় থেকে আশীর্বাদ করেই চলছে মেসির আর্জেন্টিনাকে।

একযুগের ও বেশি সময় ধরে ফুটবল বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন লিওনেল মেসি। ফুটবলের সব মধুই যিনি উপভোগ করেছেন দুর্ভাগ্য হলে-ও সত্য জেতা হয় নি কোন ইন্টারন্যশনাল ট্রফি। শুধু টিভি পর্দায় খেলা দেখে যার ভক্ত হয়েছেন কোটি মানুষ। তারা সকলেই হয়তো চাইছেন অন্তত মেসির জন্য হলেও কাপ টা জিতুক আর্জেন্টিনা। বহু ব্রাজিল ভক্ত ও মনের অন্তরালে চাইছেন এমন কিছু। অপরদিকে নেইমার ও যে জেতেননি এক কনফেডারেশন কাপ বাদে আর কোন ট্রফি। তিনি ও মেসির মতো হয়তো খুব করে চাইছেন একটি ট্রফি। গতবারের কোপা তার দল জিতলে ও ইনজুরি রেখেছিল তাকে মাঠের বাইরে। সেই আফসোস ও ভোলার নয়। তিন বার কোপার ট্রফিতে ঘ্রাণ পেয়ে ও ফিরে আসা মেসি ও চাইছেন এবার কাপ টা নিজের করে নিতে সুতরাং সেলেকাও এবং আলবিসেলেস্তে দের সমানে সমান এক লড়াই দেখার আশা ফুটবল বিশ্ব করতেই পারে।

শতাব্দী প্রাচীন এই দ্বৈরথের বহু কালো অধ্যায় থাকলে ও কোটি ফুটবল ভক্ত টিভি সেটের সামনে বসে আগামীকাল শুধু সৌন্দর্য টাই উপভোগ করতে চাইবেন। সেই সাথে মাঠের বাইরে সৌন্দর্য টা বজায় রাখা আমাদের দায়িত্ব।