কোপার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের মুখোমুখি হচ্ছে তাদের ফুটবলীয় চিরশত্রু আর্জেন্টিনা। মেসি বনাম নেইমার, হেসুস/জেসুস বনাম মার্টিনেজ, এডারসন বনাম এমিলিয়ানো। তারকাদের পশরা সাজিয়ে শুরু হবে কোপার ফাইনাল। সর্বোচ্চ গোল (৪) এবং এসিস্ট (৫) এবং সর্বাধিক ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে ফাইনালের স্পটলাইট নিজের দিকে রেখেছে আর্জেন্টাইন ফরওয়ার্ড লিওনেল মেসি। অন্যদিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসিস্ট এবং সরাসরি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে স্পটলাইটের যোগ্য অংশীদার হিসেবে খেলবে ব্রাজিলিয়ান ফরওয়ার্ড নেইমার। কোপায় তাদের সর্বশেষ ৩ দেখায় ব্রাজিলের ২ জয় এবং ১ ড্র। সবধরনের ম্যাচ মিলিয়ে তাদের সর্বশেষ ৫ দেখায় আর্জেন্টিনার ২ জয় এবং ব্রাজিলের ৩ জয়। সর্বশেষ ফ্রেন্ডলি ম্যাচে ১-০ গোলে জয় লাভ করে আর্জেন্টিনা, একমাত্র গোলদাতা মেসি।

স্কোলারির অধীনে ২০১৪ এর সেমিফাইনালের দুঃস্বপ্নের পর ব্রাজিলের দায়িত্ব নেয় কার্লোস দুঙ্গা। কিন্তু তার দুই বছর পর কোপার গ্রুপ পর্ব অতিক্রম করতে ব্যর্থ হওয়ায় বহিস্কৃত হন, দায়িত্ব নেয় তিতে। তিতের অধীনে ব্রাজিল ধীরে ধীরে আবার পূর্বের ভয়ানক রূপে ফিরে আসে। ২০১৮ এর বিশ্বকাপ যাত্রা মনমতো না হলেও তারুণ্যের ঝলকে বিশ্বকে আগাম জানান দেয় তারা তাদের পূর্বরূপে ফিরে আসার। প্রতিটি পজিশনে এক্সপেরিয়েন্সড এভং ওয়ার্ল্ডক্লাস প্লেয়ারের পাশাপাশি রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে তরূণদের সংখ্যা ব্রাজিলের স্কোয়াড ডেপথে অসাধারণ সংযোজন করেছে। পাশাপাশি একটু নির্দিষ্ট ফরমেশনে না খেলিয়ে ভিন্ন ম্যাচে স্কোয়াড ডেপথ ব্যবহার করে একাধিক ফরমেশন খেলানোয় ব্রাজিল এখন আনপ্রেডিক্টেবল। তিতের অধীনে ডিফেন্সে ব্রাজিল মারাত্মক উন্নতি করেছে৷ অভিজ্ঞ সিলভা, মারকুইনহোসের পাশাপাশি সেন্টার-ব্যাক সামলায় দারুন ফর্মে থাকা মিলিশাও। ফুলব্যাকে দানিলোর সাথে লদি ও তাদের পরিবর্তে এমারসন ও সান্দ্রোর মতো খেলোয়াড়। মিডফিল্ড এ রয়েছে তাদের বিশ্বসেরা ডিএম ক্যাসেমিরো এবং ফাবিনহো। ফরওয়ার্ড লাইন আরও ভয়ংকর। নেইমারের পাশাপাশি জেসুস, রিচার্লিসন, ফিরমিনো৷ আর গোলবার সামলানোর দায়িত্বে আছে বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা কিপার এলিসন, এডারসন। গ্রুপপর্বের ম্যাচগুলোতে ৪-৪-২ খেলালেও ব্রাজিল নকআউট স্টেজে প্রতি ম্যাচে ৪-২-৩-১ খেলিয়েছে। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আমার মতে এডারসনের সামনে থিয়াগো সিলভা ও মারকুইনহোস খেলবে। ফুলব্যাকে থাকছে লোদি ও দানিলো। পিভটে যদি ফ্রেড এবং ক্যাসেমিরো খেলে তবে দুই উইং এ আমরা নেইমার ও এভারটনকে দেখতে পাব। টার্গেটম্যান হিসেবে রিচার্লিসন এবং সেকেন্ড স্ট্রাইকার হিসেবে ফিরমিনো বা পাকুয়েতা। জেসুস ম্যাচটি মিস করবে চিলির বিপক্ষে লাল কার্ডের জন্য।

অন্যদিকে ২০১৪ বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নেয় এদগার্দো বাউজা। কিন্তু ২০১৮ বিশ্বকাপ এ কোয়ালিফাই করতে হিমশিম খাওয়ায় তাকে স্যাক করা হয় এবং দায়িত্ব দেয়া হয় হোর্হে সাম্পাওলিকে। ২০১৮ বিশ্বকাপে টেনেটুনে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে যেয়ে ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ এ হারার পরে দলের দায়িত্ব ছেড়ে দেয় সাম্পাওলি। লিওনেল স্কলানিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তারপর থেকে গত ৩ বছরে স্কলানির নেতৃত্বে প্রতি পজিশনে তরুণদের সুযোগ দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা হয়। যার ফলস্বরূপ দলে এখন প্রতিটি পজিশনে তরুণ খেলোয়াড়ে ভরপুর। গোলবারে নতুন এবং ইপিএলের গত সিজনে সবচেয়ে বেশি সেভ দেয়া এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। ডিফেন্সে ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, লিসান্দ্রো মার্টিনেজ এর মতো তরুনদের সঙ্গে পেজ্জেলা ও ওটামেন্ডি। ফুলব্যাকে ফয়েথ, মলিনো, মন্টিয়েল, টাগলিফিকো ও আকুনা। মিডে পারাদেস, ডি পল, রদ্রিগেজ, লে সেলসো৷ ফরওয়ার্ড লাইনে তরুণ মার্টিনেজ, নিকো, কোরেয়াদের সঙ্গে অভিজ্ঞ মেসি, মারিয়া, আগুয়েরো। বেশিরভাগ ম্যাচে আর্জেন্টিনা ৪-৩-৩ খেললেও ৪-২-৩-১ ও হতে পারে ব্রাজিলের বিপক্ষে ফাইনালে তাদের ফরমেশন। এমিলিয়ানো মার্টিনেজের সামনে রোমেরো এবং ওটামেন্ডি জুটি দেখা যেতে পারে। ফুলব্যাকে আকুনা এবং মলিনা। যদি পিভট খেলে তবে পিভটে রদ্রিগেজ এবং ডি পলকে দেখার সম্ভাবনা বেশি। তবে যদি ৩ ম্যান মিড খেলে তবে ডি পল, রদ্রিগেজ এবং পারাদেজ খেলতে পারে। পারাদেজের পরিবর্তে লে সেলসোও খেলতে পারে। ফ্রন্ট লাইন যদি ৩-১ হয় তবে টার্গেট ম্যান হিসেবে আগুয়েরো, দুই উইং এ মারিয়া এবং গোমেজ/মার্টিনেজ এবং সেকেন্ড স্ট্রাইকার হিসেবে মেসিকে দেখতে পারব। যদি ৩ ম্যান ফরওয়ার্ড লাইন হয় তবে মেসি, মার্টিনেজ এবং নিকো খেলবে। সেকেন্ড হাফে নিকো সাব হয়ে মারিয়া নামবে।

নিউট্রাল পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে দেখলে ব্রাজিলের জেতার সম্ভাবনা বেশি। কারণ অভিজ্ঞতা এবং প্লেয়ার টু প্লেয়ার কম্প্যারিসনে ব্রাজিল এগিয়ে। আর্জেন্টিনার তরুণ দল, কিন্তু তাদের সাথে রয়েছে তর্কসাপেক্ষে ফুটবল ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। অপরদিকে কোচদের দিকে নজর দিলে দেখা যায় টেকনিকাল সাইড থেকে তিতে স্কলানি থেকে বেটার। আর হোমগ্রাউন্ড এডভান্টেজও পাচ্ছে ব্রাজিল। আর্জেন্টিনা ক্ষানিকটা স্রোতের প্রতিকূল এ থাকলেও ডিফেন্সিভলি সলিড থাকলে তাদের মিডফিল্ড এবং ফরওয়ার্ড লাইন যেকোন মুহূর্তে অঘটন ঘটাতে পারে। অন্যদিকে ব্রাজিলের স্কোয়াড, যেকোন অঘটনের মোকাবিলায় বেশ ভালোভাবেই প্রস্তুত। সুন্দর একটু খেলার অপেক্ষায় বিশ্ববাসী, সুপারক্লাসিকো, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা।