” সাকিব ভাই তাড়াতাড়ি শেষ করেন, অনেকদিন পর বাড়ী যাবো “– হয়তো এখন আর এমন কোন বাংলার ক্রিকেট ভক্ত নেই যে এই সংলাপের সাথে পরিচিত না। অজি- বাংলাদেশ সিরিজের শেষ ম্যাচে সাকিবের ঘূর্ণিতে যখন টিম অস্ট্রেলিয়া কুপোকাত এমনই এক মুহূর্তে স্ট্যাম্প এর মাইক্রোফোন থেকে নুরুল হাসান সোহানের এই সংলাপ ভেসে এসেছিল। পুরো অজি সিরিজে এরকম বহু সংলাপ সোহানের বদৌলতে শুনেছিলাম। এই আলোচনার অবতারনা আসলে উইকেটের পিছনে সোহানের উপস্থিতি বুঝাতে।

আমাদের নিয়মিত উইকেট কিপার মুশফিক বাবার অসুস্থতায় মিস করেন জিম্বাবুয়ে সিরিজের চার ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার নিয়মের বেড়াজালে পরে অজি সিরিজে ও খেলার সুযোগ হারান। এতেই কপাল খুলে নুরুল হাসান সোহানের। প্রায় তিন বছর আগে জাতীয় দল থেকে বাদ পরা সোহান যে আমাদের ক্রিকেটের সেরা উইকেট কিপার তাতে কারো সন্দেহ ছিল না। কিন্তু তার ব্যাটিং নিয়ে ছিল যত প্রশ্ন। বিপিএল, ডিপিএল সহ ঘরোয়া ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে নিয়মিত খেলে গেলে ও গত বছরটা ছিল তার জন্য স্পেশাল।

গত বিপিএল, ডিপিএল, এনসিএল সব জায়গায় তিনি তার উইকেট কিপিং এর সাথে ব্যাটিং এর যে উন্নতি করছিলেন তার সাক্ষর রাখছিলেন। সর্বশেষ ডিপিএল এ তিনি রান করেছিলেন প্রায় ৩০০ উর্ধ। ছিলেন টপ স্কোরার দের তালিকার ৩ নম্বরে। তবে আলোচনায় এসেছিল তার কার্যকর ব্যাটিং। দলের প্রয়োজনে যখন যেভাবে প্রয়োজন ছিল ব্যাটিং করেছেন সেভাবে। পুরো ডিপিএল এ তার স্ট্রাইক রেট ছিল প্রায় ১৫০।একজন লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানের জন্য এই পরিসংখ্যান নিশ্চয়ই ঈর্ষনিয়। তবে বাদ সাধে তার ব্যাটিং পজিশন। সোহানের ব্যাটিং অর্ডারে আফিফ এবং রিয়াদ এর পারফরম্যান্স জাতীয় দলে তাদের অটো চয়েজে পরিনত করে।
তাই সুযোগ টা সোহান এর প্রাপ্য হলে ও আসলে পাচ্ছিলেন না সুযোগ। এ নিয়ে ক্রিকেটপাড়ায় সমলোচনার ও ছিল না কমতি। অবশেষে মুশফিকের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সোহানের জন্য হলো সোনায় সোহাগা।

উইকেট কিপার সোহানের যোগ্যতা নিয়ে কারো সন্দেহ নেই দেখার বিষয় ছিল ব্যাটিং এ কেমন করেন তিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজের শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বড় টার্গেটের সামনে খেলতে নামলে তামিমের সেঞ্চুরি বাংলাদেশ কে বেশ এগিয়ে দিলে ও শেষে গিয়ে বিপদে পরে টিম বাংলাদেশ। এই ম্যাচেই ছিল ব্যাটসম্যান সোহানের নতুন প্রত্যাবর্তনের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট। সেই ম্যাচে তিনি ৩৯ বলে ৪৫ রানের এক সময়োপযোগী ইনিংস খেলে দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। এরপরে টি-টুয়েন্টি সিরিজে তাকে খুব বেশি প্রমান করতে না হলে ও অজি সিরিজের ২য় ম্যাচে আবার তিনি নিজেকে প্রমানের সুযোগ পান। ৬৫ রানে বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারালে আফিফের সাথে খুবই গুরুত্তপুর্ন এক জুটি গড়েন সেই সাথে দলকে ও নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। যেটা বলছিলাম তার ব্যাটিং কার্যকারিতা। তার ব্যাটিং স্কিল হয়তো খুব আহামরি কিছু না কিন্তু কার্যকর ব্যাটিং যে আমাদের খুব দরকার।সেই সাথে ফিনিশিং টা যে তিনি ভালোই পারেন তা তিনি প্রমান করে দিয়েছেন।

তবে মুশফিক যে টিম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার আগমন সোহানের দলে জায়গা পাওয়া টাকে কিছুটা হলেও সংকিত করবে। মুশফিক যে কিপিং টা করতে চান তা বহু আগেই বলেছেন।বহু সমলোচনার পরে টেস্টে তিনি কিপিং টা ছেড়েছেন সম্প্রতি। কিপিং ছাড়লে ব্যাটিং এ যে তিনি বেশ মনযোগী হতে পারেন তার সাম্প্রতিক টেস্ট পারফরম্যান্স তাই বলে। সম্প্রতি তিনি ডাবল সেঞ্চুরি ও করেছেন।এক কথায় কিপিং ছাড়ার সিদ্ধান্ত তার ব্যাটিং পারফরম্যান্স কে আরো ভালো করেছে। তিনি যদি এখন দলের প্রয়োজনে শর্টার ফরম্যাটের কিপিংটা ও ছেড়ে দেন তাহলে হয়তো সোহান ও বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ভাবনায় আসতে পারেন।

প্রশ্ন আসতে পারে তার ব্যাটিং অর্ডারটা কোথায় হবে। আমার ভাবনা চার ওপেনারে দুইজন খেলবেন সেটা তো নিশ্চিত এরপরে সাকিব, মুশফিক। ইতিমধ্যেই আফিফ নিজেকে প্রমান করেছেন তিনি আসতে পারেন পাঁচে। আর রিয়াদের গেম সেন্স ছয় নম্বর পজিশনটা কে খুব বেশি দাবি করে। নাম্বার সাতে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট সৌম্য, মিথুন সাথে সাম্প্রতিক শামিম সহ আরো অনেককে ব্যবহার করেছেন সবাই ছিলেন ব্যার্থ। সে তুলনায় সোহান ছিলেন যথেষ্ট সাবলীল। সাথে তার অনবদ্য কিপিং টা তো আছেই। সব মিলিয়ে নম্বর সাতের জায়গা টা তিনি দাবি করতেই পারেন।

অন্তত আসন্ন নিউজিল্যান্ড সিরিজে টিম ম্যানেজমেন্ট মুশফিকের সাথে সোহানের একটা কম্বিনেশন ট্রাই করতেই পারে। তবে অবশ্যই প্রথম শর্ত দলের প্রয়োজনে মুশফিকের কিপিং পজিশনের স্যাক্রিফাইস । আমাদের মাথায় রাখতে হবে সোহান উইকেটকিপার কাম ব্যাটসম্যান আর মুশফিক ব্যাটসম্যান কাম উইকেট কিপার।

সোহান যে শুধু কিপিং- ব্যাটিং এ ভাল করছেন তা কিন্তু নয়। উইকেটের পিছনে তার দলকে উজ্জীবিত করার ক্ষমতা ও সত্যিকারার্থেই অসাধারণ। আজকের লেখার শুরুটা করেছিলাম তার এই উজ্জীবিত করার ক্ষমতা নিয়ে কথা বলে শেষ টা ও করছি একই ভাবে।