পাঁচদিনে খেলা হবে ৪৫০ ওভার এইতো নিয়ম। তবে প্রকৃতি কি মানব রচিত নিয়মের ধার ধারে। প্রথম দিন বৃষ্টি চতুর্থ দিন বৃষ্টি একটি বল ও গড়ায় নি মাটে। কে ভেবেছিল এমন ম্যাচে রেজাল্ট আসবে। কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার ও করেছিলেন মন খারাপ। কেউ পরামর্শ দিচ্ছিল টেনিস কিংবা ফুটবলের মতো ট্রাইবেকার জাতীয় কিছু। তবে আইসিসি যে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল কে করতে চেয়েছিল পূর্ণাঙ্গ তাই তো ছিল রিজার্ভ ডে। টেস্ট তো হওয়া উচিত এমনই সময়ে সময়ে যার রং বদলায়।
দেড় বছর আগে আঘাত হানা মহামারি করোনা তে লন্ডভন্ড ছিল ক্রীড়া দুনিয়া। মন ভেঙেছিল ক্রীড়া ভক্তদের কিন্তু তার আগেই কিউইদের মন ভেঙেছিল ১৯ বিশ্বকাপ। মন ভাঙার জন্য ১৫ এর ফাইনাল ই ছিল যথেষ্ট। কিন্তু সেই বেদনা কে আরো বিষাদময় করেছে এক আজব নিয়ম যা পূর্বে শুনেনি কেউ। উইলিয়ামসন এর সেদিনের মুখবয়ব শুধু কিউই দের কাদায় নি কাদিয়েছিল পুরো দুনিয়ার লাখো ক্রিকেট ভক্তকে। ইংলিশ আকাশে পড়ন্ত বিকেলের সোনালী আভা অবশেষে সেই নীল গল্পের ইতি টানলো।
এ সমাপ্তি সাধারণ কোন সমাপ্তি নয় এযেন মহাকাব্যিক সমাপ্তি। সাজানো ট্রফি কে অনেকেই গ্রাম বাংলায় প্রচলিত গদার সঙ্গে তুলনা দিয়ে মজার ছলে লিখছিলেন গদাসদৃশ ডান্ডা। এই দণ্ড উইলিয়ামসনের হাতে যেতেই মনে হতে লাগলো রাজদণ্ড। কেনই বা মনে হবে না আগামী দুবছর যে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ফরম্যাট টেস্টের রাজা কিউই শিবির।
কিউই ভক্তরা আরো একবার হয়তো করোনার সহিত অভিমান করতে পারতেন। কারণ এই ম্যাচ যে হওয়ার কথা ছিল কিউই দের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ সদৃশ ঐতিহাসিক লর্ডস এ। করোনার বিস্তার এই মহাযজ্ঞের ভেন্যু হওয়ার সৌভাগ্য হতে বঞ্চিত করেছে লর্ডস কে। কিন্তু উইলিয়ামসন এর এ বিজয় শুধু সাউদ্যাম্পটন নয় দুনিয়ার যে প্রান্তেই হতো না কেনো কিউই দের খুশির কোন কমতি নিশ্চয়ই হতো না। অন্তত ইংলিশ সামারের সোনালী আলোয় উইলিয়ামসনের চওড়া হাসি তাই প্রমাণ করে।
বিশ্বক্রিকেটে সব সময় মাঝারি মানের দল হিসেবেই পরিচিত ছিল কিউই বাহিনী। বিশ্বব্যাপি অজি কিংবা ভারতীয় দের মত সাপোর্টার হয়তো তাদের নেই। তবে হলফ করেই বলতে পারি আমার মতো নিউজিল্যান্ড সাপোর্টার দের বেশিরভাগেরই নিউজিল্যান্ডের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টির অন্যতম কারণ কিউই টেস্ট ক্রিকেট এর সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক উইলিয়ামসন এবং টেইলর। এবং তাদের হাত ধরেই বেরিয়ে এলো কিউই দের মহাকাব্যিক জয়। এর চেয়ে ভালো সমাপ্তি আর কিইবা হতে পারতো।
কেন উইলিয়ামসন: প্রথম ইনিংসে ৪৯ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে প্রবীণ রস টেইলরে কে সাথে নিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে তবেই মাঠ ছেড়েছেন। দুই দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে স্রোতের বিপরীতে উইলিয়ামসনের এমন ইনিংস যেন আরো একবার ঘোষণা করে এই রাজদণ্ড তার হাতেই সর্বোচ্চ মানানসই।
তবে তার মানে এই না কোহলির হাতে বেমানান হতো এই কাপ। ওডিআই এবং টেস্টে সর্বকালের সেরা হওয়ার পথে যত দ্রুতই তিনি আগান না কেন তাকে নিয়ে আইপিএল এ যতই টানাটানি হোক না কেন তিনিই হয়তো গত কয়েকবছরে সর্বোচ্চ বার মিডিয়ায় টেস্টের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন। ক্রিকেটের পোস্টার বয় কোহলির হাতে এই কাপ নিশ্চয়ই ক্রীড়া প্রেমীদের চোখে শান্তি হতো। কারণ তিনি ও যে এখনও কোন ইন্টারন্যশনাল টুর্নামেন্ট জয়ের নেতৃত্ব দিতে পারেননি।
দুই হতভাগা বীরের লড়াইয়ে অবশেষে উইলিয়ামসন এর বিজয় হলো সাথে বিজয় হলো টেস্টের। সেই সঙ্গে ক্রিকেট ও অর্জন করলো এক নতুন অধ্যায় টেষ্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম বিজয়ী ব্ল্যাক ক্যাপস খ্যাত নিউজিল্যান্ড।