বাংলাদেশ ক্রিকেট শব্দটি শুনতে পেলে প্রথমেই যে ক্রিকেটারের নাম আপনার আমার মনের মধ্য থেকে বেড়িয়ে আসবে সেটা হল সাকিব অর্থাৎ সাকিব আল হাসান। মাঠে বা মাঠের বাইরে যেখানেই হোক না কেন সাকিব থাকবেন আলোচনাতে সবার উপরে । সদ্য শেষ হওয়া বিপিএলে পুরো টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়া, আইপিলে দল না পাওয়া কিংবা সাউথ আফ্রিকা সিরিজে সাকিবের থাকা না থাকাকে কেন্দ্র করে অনেক গুঞ্জন চলতে থাকে , চলে আলোচনা সমালোচনা। সবকিছুর শুরু আইপিএলকে কেন্দ্র করে। সাকিব প্রধানত আইপিলে খেলতে চান এবং সেই কারনে তিনি সাউথ আফ্রিকা সিরিজে টেস্টে থাকতে চাননি। কিন্তু এবার বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারকে দলে ভেরাতে কোনো দলই আগ্রহ দেখায় নি। ফলে তাঁর সাউথ আফ্রিকাইয় দলের সাথে যাওইয়ার সময় নিয়ে তেমন আর বাঁধা ছিল না। কিন্তু নামটা যখন সাকিব তখন সেখানে নাটকীয়তা থাকবেনা তা মেনে নেয়া সম্ভব নয়। আগামী ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত তাঁকে ছুটি দেয় বিসিবি অনেকটা বাধ্য হয়েই। অবশ্য অনেক আগে থেকেই সাকিবের টেস্ট খেলার প্রতি অনাগ্রহ দেখা গেছে। তবে সেই সাথে দলের সাথে অনেক সিরিজেই দেশের বাইরে তাঁকে ছুটি নিতে দেখা গেছে। গত ৫বছরে তিনি ৩ বার নিউজিল্যান্ড সফর, ২ বার লংকা , ২ বার সাউথ আফ্রিকা সিরিজে ছুটি নিয়েছেন কিন্তু ৮ বার আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে সিরিজে যান।কিন্তু তিনি অবশ্য শ্রীলঙ্কার সাথে টেস্ট দলে থাকতে চেয়েছিলে কিন্তু বর্তমানে মানসিক অবস্থার কথা উল্লেখ করেই তিনি ছুটি নিয়েছেন বিসিবির কাছ থেকে। কিন্তু সাকিবের এই দলে থাকতে চাওয়া-না চাওয়া কে কেন্দ্র করে বিসিবির সাকিবের প্রতি দুর্বলতা বা কিছু খেলোয়াড়ের প্রতি দুর্বল এমন মনোভাব নিয়ে যখন সমালোচনা উঠছিল তখনই বিসিবি সভাপতি কড়া ভাষায় জানিয়ে দেন যে একটা খেলোয়াড়ই সব না।
সত্য কি তা বলে? এটা ঠিক যে বাংলাদেশের অনেক ঐতিহাসিক জয়, অনেক ঐতিহাসিক মূহুর্তের জন্মদাতা সাকিব। তাঁকে দলে পাওয়া মানে দলে একই সাথে একটা বোলার,ব্যাটসম্যান ,ফিল্ডার ও ডিসিশন মেকারের অন্তর্ভুক্তি। সেখানে তিনি বাংলাদেশ দলের প্রাণ। সেই প্রাণভোমরাকে ছাড়া যের বাংলাদেশ চলবে না এমন না, এটা ঠিক যে সাকিব থাকাকালীন যতটা ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছে তার চেয়ে কম সাকিববিহীনভাবে জিতেছে। কিন্তু একজন খেলোয়াড়ই তো সব হতে পারেন না। সাকিবকে যদি এভাবেই বিসিবি প্রশ্রয় দিতে থাকে তবে অন্য খেলোয়াড়দের জন্য তা বাজে উদাহরণ সৃষ্টি করবে। ফলে দেখা যাবে সাব্বির, নাসিরের মতো খেলোয়াড় সৃষ্টি হচ্ছে,যারা কিনা দলকে সার্ভিস দিতে পারতেন বহুদিন কিন্তু হারিয়ে গেলেন। আফিফ,মিরাজ কিংবা শরিফুলদের মতো খেলোয়াড়রা যেন নিজেকে সব ভাবতে শুরু না করেন বা তাঁদের ছাড়া দল চলবে না এমন চিন্তা যেন না করে বসেন তার জন্য বিসিবির শক্ত হওয়াটা জরুরি। সে ক্ষেত্রে বিসিবি সভাপতির কড়া ভাষায় সাকিবের আচরণের জবাবটাকে খারাপ চোখে দেখা যাবে না। কিন্তু একহাতে তো আর তালি বাজে না। একই খেলোয়াড়কে বিসিবি একটানা খেলিয়ে যায়, একজনের উপরই সর্বোচ্চ নির্ভরশীলতার উদাহরণ সাকিব একা নন। একটা সময় দলে শুধু পেসার হিসেবে মাশরাফিকেও ব্যবহার করছে বিসিবি বহুদিন। কিন্তু এই খেলোয়াড়রা যে অবসর নিলে শূন্য স্থান হবে সেটাকে পূরণের ব্যবস্থা বিসিবি করে নি বলতে গেলে। হ্যাঁ এটা ঠিক যে বিসিবি কেন কেউই আবার আরেকটা সাকিব তৈরি বা দলে আনতে পারবে না। কিন্তু অন্তত বিকল্প খেলোয়াড়ের ব্যবস্থা করা উচিত এবং বিকল্প খেলোয়াড়ের জন্য পাইপ লাইনটা মজবুত করা উচিত। যার ফলে বর্তমানের মতো হয়ত এতো সমালোচনা উঠত না কেননা একজন খেলোয়াড়ের অধিকার রয়েছে ছুটি নেয়ার আবার সে একটানা খেলেও যেতে পারবে না। তবে আলোচনায় বাংলাদেশের এই সেরা ক্রিকেটার আবারো তাঁর ৩ ফরমেটেই বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে অন্তর্ভুক্তিকে কেন্দ্র করে।