অনেকটা হঠাৎ করেই যেন নিউজিল্যান্ডে পুরনো টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট রূপে ফিরলেন সৌম্য সরকার! জিম্বাবুয়েতে টি-টোয়েন্টি সিরিজের যে দুটি ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ, দুটিতেই ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরি করে ম্যাচসেরা হয়েছেন সৌম্য। মাঝের ২য় ম্যাচে হাসেনি সৌম্যের ব্যাট, জেতেনি বাংলাদেশ।
আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বিবেচনায় বেশ কিছু ট্রায়াল চালানো হয়েছে বাংলাদেশ টি২০ দলের উপর। তামিমের ওপেনিং পার্টনার হিসেবে নাইম ও সৌম্যকে পরখ, নবাগত শামিম মেহেদি শরিফুল সোহান নাসুমদের পারফরম্যান্স, মোটকথা তরুণদের উপর নির্ভর করে টি-টোয়েন্টি দল কতটা কার্যকর- তা নিয়ে বিস্তর কাটাছেঁড়ার সুযোগ পাওয়া গেছে। দলটা জিম্বাবুয়ে হলেও টেস্ট ওডিআই এর তুলনায় টি-টোয়েন্টি তে তাদের পারফরম্যান্স তুলনামূলক বেশ ভালো। তিনটে ম্যাচেই জমপেশ লড়াই হয়েছে। মাধেভেরা, চাকাবভা,মারুমানি, মুজারাবানিদের নিয়ে গড়া সিকান্দার রাজার নেতৃত্বের এই দলটা বেশ সম্ভাবনাময়।
হাঁটুর ইঞ্জুরি নিয়েও ওডিআই খেলেছেন তামিম ইকবাল। করেছেন একটা ম্যাচজয়ী সেঞ্চুরি। কিন্তু দ্রুত সার্জারি না করালে টি২০ বিশ্বকাপের জন্য অনিশ্চিত হয়ে পরতে পারেন তিনি। তাই জিম্বাবুয়ে তে টি২০ না খেলার সিদ্ধান্ত। ওদিকে মুশফিকও নেই। সিনিয়র ক্রিকেটার বলতে শুধু সাকিব আর মাহমুদউল্লাহ। তবুও ভালোই করেছেন সৌম্য শামিমরা.. বলতেই হবে। তবে আবারো হতাশ করেছেন মেহেদি হাসান।
সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি তে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে জিম্বাবুয়ে। শুরু থেকেই টাইগার বোলারদের উপর চড়াও হতে থাকেন দুই ওপেনার মাধেভেরা ও মারুমানি। মারুমানি ২৭(২০) রানে আউট হলে চাকাবভা যেন উইকেটে নেমে ঠিক মারুমানির ইনিংসটাকেই চালিয়ে নিয়ে গেলেন। শেষ দিকে মায়ার্সের ২৩(২১) ও রায়ান বার্লের ৩১(১৫) রানে ভর করে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৯৩; যা বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের সর্বোচ্চ রান। বাংলাদেশের পক্ষে সৌম্য ২ টি, সাইফুদ্দিন, শরিফুল ও সাকিব ১ টি করে উইকেট নেন। তবে ফ্লপ গেছেন তাসকিন আহমেদ ও নাসুম আহমেদ। তাসকিনের এক ওভারে পাঁচটা বাউন্ডারি মারেন মাধেভেরা।
জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই ঝড় তোলেন সৌম্য সরকার। নাইম শেখ (৭ বলে ৩) দ্রুত আউট হলেও সাকিব(১৩ বলে ২৫) ও পরবর্তীতে মাহমুদউল্লাহ (২৮ বলে ৩৪) কে সাথে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন সৌম্য। সৌম্য করেন সর্বোচ্চ ৬৮(৪৯) রান। সৌম্যের আউটের পর ম্যাচ হেলে পরে জিম্বাবুয়ের দিকে। তবে ১৫.৪ ওভারে আফিফের (৫ বলে ১৪) আউটের পর ব্যাটিং অর্ডারে আট থেকে ছয়ে প্রমোশন পাওয়া শামিম ঝড়ো ব্যাটিংয়ের ক্যারিশমা দেখিয়ে ম্যাচের সাথে সিরিজ জিতেই মাঠ ছাড়েন ৪ বল বাকি থাকতেই।
ফলাফল, বাংলাদেশের ৫ উইকেটে জয়। ম্যাচ ও সিরিজ সেরা সৌম্য সরকার।
একটি টি-টোয়েন্টি বাদে সফরের সব ম্যাচ জিতেছে টিম-টাইগারস। অনেকটা অনুমিত ফলাফল। অনুমিত হলেও সামনের অস্ট্রেলিয়া সিরিজ ও টি২০ বিশ্বকাপের জন্য আত্মবিশ্বাস বাড়াবে ক্রিকেটারদের- এমনটাই মনে করেন ক্রিকেট বিশ্লেষকগণ।
সফরের প্রাপ্তি নিয়ে কথা বলতে গেলে সবার আগে বলতে হবে শামিম পাটোয়ারীর মতো একজন হার্ডহিটার পাওয়া। সাথে আছে সাকিবের রানে ফেরা, সৌম্যের উপর ভরসা ফেরা, সোহানের মতো বিকল্প প্রস্তুত রাখা (খুব শীঘ্রই আশা করি স্কোয়াডে নিয়মিত সদস্য হবেন ইন শা আল্লাহ )।
তবে মিথুন মোসাদ্দেকরা তাদের ‘লর্ড’ খ্যাতি ধরে রেখেছেন এ সফরেও। মোহাম্মদ নাইম শেখ যদি এমন পারফরম্যান্স বজায় রাখেন তাহলে খুব শিগগিরই ‘লর্ড অ্যাসোসিয়েশনে’র সদস্য হতে যাচ্ছেন। তবে ‘লর্ড’ তকমা সফলভাবে নিজের নাম থেকে সরাতে সক্ষম হয়েছেন সৌম্য সরকার, দেখা যাক তা স্থায়ী, নাকি সাময়িক!
সামনে মাসে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার সাথে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বোঝা যাবে টিম-টাইগারসের আসল অগ্রগতি। কেমন করবে টাইগাররা.. আপনার মতামত কি!?