শুধু মাত্র ভারত বনাম ইংল্যান্ডের খেলা বলে যে লোকে এই ম্যাচের প্রতি আগ্রহী ছিল ব্যপারটা মোটেই এমন না। খেলায় হারজিত থাকবেই কিন্তু ভেন্যু যখন ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত লর্ডস তখন এই হারজিতের লড়াই পরিনত হয় সম্মানের। ম্যচের প্রথম থেকে শেষ প্রতিটা মুহূর্তই ছিল রোমাঞ্চকর, অবিশ্বাস্য নাটকিয়তায় ভরপুর। লড়াই চলতে চলতে শেষ দিনে ম্যাচ কখনো এই ইংল্যান্ডের পাল্লা ভারী করছেতো আবার ভারতের দিকে ঝুকে পড়ছে। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডকে ১৫১ রানে হারিয়ে ভারতই অবিশ্বাস্য জয় তুলে নিয়েছে লর্ডস টেস্টে। দারুণ জয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গিয়েছে কোহলিরা।

সোমবার ম্যাচের শেষ দিনে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডকে ২৭২ রানের টার্গেট দিয়েছিল ভারত। ওভার ছিল ৬০। জয় না হোক অন্তত ক্রিজে আকড়ে থাকলে ড্র করতে পারত ইংল্যান্ড। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে সেই কাজটি করতে পারেনি ইংলিশ শিবির। ভারতের পেসারদের দাপটে মাত্র ১২০ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ১৫১ রানের বড় জয় পায় ভারত। প্রথম টেস্ট হয়েছিল ড্র। আগামী ২৫ আগস্ট লিডসে শুরু হবে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টেস্ট।

লিডে থাকা ইংল্যান্ডের বিপরীতে রোববার চতুর্থ দিন ভারতীয় ব্যাটিং লাইন একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি। ১৮১ রানেই হারিয়ে ফেলে টপ অর্ডারের সেরা ৬ জন কে। রিশব পন্থ ১৪ ও ইশান্ত শর্মা ছিলেন ৪ রানে অপরাজিত।

পঞ্ছম দিনের শুরুতে রিশবেই ছিল ভরসা কিন্তু আউট হলেন দ্রুতই এরপরে ইশান্ত ও গেলেন। ভারত হয়তো ২০০ র নিচে আউট হলে কি করবে তারই পরিকল্পনা করছিলো। বুমরাহ, সামির হাতে বল তুলে দিয়ে আপনি হয়তো শান্তির নিঃশ্বাস নিতে পারেন কিন্তু ব্যাটং এ তারা কি করবে যেখানে কোহলিরা পারেননি কিছুই এমনটাই ছিল ধারনা। তবে কাজের কাজটা ঠিকই করেছেন দুই পেসার মোহাম্মদ শামি ও জসপ্রিত বুমরাহ। ৭০ বলে ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন শামি। ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন বুমরাহ। ইংল্যান্ডের হয়ে মার্ক উড ৩টি, রবিনসন ও মঈন আলী দুটি, স্যাম কুরান একটি উইকেট নেন।

জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে ইংল্যান্ড। দলীয় স্কোরে এক যোগ হতে না হতে বিদায় নেন দুই ওপেনার। সেই রানটিও এসেছে অতিরিক্ত খাত থেকে। প্রথম ওভারে বুমরাহর বলে প্রথম সিরাজের হাতে ক্যাচ দেন ররি বার্নস। দ্বিতীয় ওভারে শামির শিকার ডম সিবলি। তিনি ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে রিশব পন্থের হাতে।

এরপর হাল ধরার চেষ্টা করছিলেন হাসিব হামিদ ও অধিনায়ক জো রুট। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি হামিদ ও। ৪৫ বলে ৯ রান করে ইশান্ত শর্মার বলে এলবিডব্লিউ হন দলীয় ৪৪ রানে।

বেয়ারস্টোর সাথে রুটের জুটিতেই ছিল ভরসা। কিন্তু সেখানেও ফাটল ধরান ইশান্ত শর্মা। ২৪ বলে ২ রান করা বেয়ারস্টোকে ফেরান তিনি। পরের ওভারে বড় উইকেট বগল দাবা করেন বুমরাহ। ৬০ বলে ৩৩ রান করেন ফেরেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। ৬৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন দিশেহারা ইংলিশ শিবির। এরপর রান নয়, উইকেটে টিকে থাকার লড়াইয়ে মন দেন জস বাটলার ও মঈন আলী। এই জুটি ৭৬ বল পার করে দেয়। রান আসে ৩০।


দলীয় ৯০ রানে আসেন ভারতের প্রথম ইনিংসে ভালো বল করা পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। এসেই জোড়া আঘাত হানেন । টানা দুই বলে ফেরান মঈন আলী (৪২ বলে ১৩ রান) ও স্যাম কুরানকে (০)। এরপর বাটলারের সাথে জুটি বাধেন রবিনসন। নিজের ২ রানে কোহলির হাতে জীবন পাওয়া বাটলার ক্রিজে থাকার লড়াই টা সামাল দিচ্ছিলেন ভালই। তবে তা আর হলো কোথায় ১২০ রানে ভাঙে এই জুটি। রবিনসনকে ফেরান বুমরাহ। এরপর আর রানই তুলতে পারেনি ইংল্যান্ড।

বাকী কাজটা সমাধা করেন টেস্ট সেরা বোলার সিরাজ। একই ওভারে আবার নেন জোড়া উইকেট। ৯৬ বলে ২৫ রান করা বাটলারকে পন্থের গ্লাভসে বন্দী করেন তিনি। একই ওভারের পঞ্চম বলে অ্যান্ডরসনকে বোল্ড করে জয়ের উচ্ছ্বাসে মাতেন তিনি। সাথে গোটা ভারত শিবির।

বল হাতে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নেন মোহাম্মদ সিরাজ। জসপ্রিত বুমরাহ তিনটি, ইশান্ত শর্মা দুটি ও মোহাম্মদ শামি নেন একটি উইকেট।