উসাইন বোল্ট, জ্যামাইকা , স্প্রিন্ট এই শব্দ গুলো একে অপরের পরিপূরক বললে ভুল হবে না। ২০০০ সালে প্রথম বারের মত অলিম্পিকের ট্র্যাকে নেমেছিলেন বোল্ট, সেবার হয়তো পারেননি এরপর ২০০৪ থেকে ১৬ র রিও অলিম্পিক টানা ৪ টি অলিম্পিকে স্প্রিন্টের সব সোনায় কিংবদন্তী বোল্টের হাত ধরে নিজেদের করে নিয়েছিল জ্যমাইকা।

বোল্ট এককভাববে দ্যুতি ছড়ানোয় জ্যামাইকান অন্য স্প্রিন্টাররা হয়তো আলোচনায় আসতে পারেননি। তবে ইউহান ব্লেক দের পারফরমান্স জানান দিচ্ছিল তারাই হবেন বোল্টের যোগ্য উত্তরসূরি।

অবাক করা হলে ও সত্য এক যুগের ও বেশি সময় স্প্রিন্ট ইভেন্ট দাপিয়ে বেড়ানো জ্যমাইকানদের কোন পুরুষ প্রতিযোগী টোকিও অলিম্পিকের ফাইনাল রাউন্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। তবে যথারীতি মহিলা একক কিংবা দলগত তে থম্পসনের হাত ধরে জ্যমাইকা সেরার খেতাব ধরে রেখেছে।

উসাইন বোল্ট যিনি জ্যমাইকা কে নেতৃত্ব দিয়েছে যুগের ও বেশি সময় ধরে অলিম্পিক আসর শুরুর আগেই জ্যামাইকান স্প্রিন্টার দের দুরবস্থা নিয়ে সতর্ক করছিলেন। এক সাক্ষাতকারে বোল্ট বলছিলেন ” গত বেশ কিছু অলিম্পিকে আমাদের আমাদের অ্যাথলেটিক্স এ আমরা অনেক ভালো ভালো কিছু অ্যাথলেট পেয়েছিলাম, বর্তমান সময়ের জন্য আমি লজ্জিত। পুরো বিশ্ব আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আমাদের প্রতিভা বরাবরের মতই অফুরন্ত তবে ভালো ম্যানেজমেন্ট। চেষ্টা এবং ভালো ম্যানেজমেন্ট এর বিকল্প নেই।”

যদিও বোল্টের এমন সতর্কবার্তা নতুন ছিল না। ২০১৭ সালে বোল্ট যখন শেষবারের মত ট্র্যাক মাড়ান সেদিন ও তিনি বলেছিলেন ” আমাদের এই অগ্রযাত্রা অব্যহত করতে হবে। আমাদের সফলতা বজায় রাখতে হবে। তবে সত্যি বলতে আমি এম্ন কাউকে দেখছিনা। একজন জ্যামাইকান হিসেবে আমার জন্য এই ভবিষ্যৎ বেশ বিব্রতকর।”

সফলতার জোয়ারে এই কিংবদন্তী স্প্রিন্টারের সতর্কবার্তা হয়তো তখন খুব একটা গায়ে লাগেনি। তবে টোকিও অলিম্পিকে জ্যমাইকার দৈন্যদশা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে আসলেই স্প্রিন্টে জ্যামাইকান রুপকথা কি শেষ হওয়ার পথে।

সত্যি বলতে জ্যমাইকার এই পতন একদিনে আসেনি। ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিকের স্প্রিন্টে কোন জ্যামাইকান পদক না জিতলে ও সাংবাদিক আন্দ্রে লোয়ে তার কলামে লিখেছিলেন ” আমি খুব একটা চিন্তিত নয় আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জল। আমাদের তরুনেরা পরের আসর আসতে আসতে আরো পরিনত হবেন আশা করি তারা ভালো কিছু উপহার দেবেন। ” তার সে উক্তি যে মিথ্যা ছিল না পরবর্তি ৪ অলিম্পিকে বোল্ট এন্ড কো. তাই প্রমান করেছেন।

জাতিগতভাবে স্প্রিন্ট ইভেন্ট টা জ্যামাইকান দের ফেভার করে সেকারনে বলা হয় জ্যমাইকায় স্প্রিন্ট প্রতিভার অভাব নেই। তবে দরকার প্রপার নারসিং, এছাড়া পদক জয় অসম্ভব। আর এই ভুলটায় হয়েছে গত কয়েক বছরে। বোল্টের সফলতায় ভাসতে থাকা জ্যামাইকা পদক উদযাপন করতে গিয়েই হয়তো ভুলে বসেছিল ভবিষ্যতের কথা। একই সাথে একের অধিক স্প্রিন্টারের অবসর কোয়ালিটিফুল স্প্রিন্টারের সংকট তৈরি করেছিল। এছাড়া ভরসা থাকা ইউহান ব্লেক এবং অব্লিকে সেভাইল দুইজনই ছিলেন ইনজুরিতে।

এটা হয়তো খুব তাড়াতাড়ি হবে যদি বলে দেয় জ্যমাইকান স্প্রিন্টের ভবিষ্যৎ শেষ। জ্যমাইকা স্প্রিন্টার জন্ম দিয়ে খ্যাত। জ্যমাইকা বোল্ট কে যেহুতু সৃষ্টি করতে পেরেছে তারা তার উত্তরসূরি ও হয়তো পাবেন। তবে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। বোল্টের সফলত্‌ পদক জয়ের সক্ষমতা এবং রেকর্ড সাফল্যের একটা প্যারামিটার সেট করে দিয়েছে। সেটা এচিভ করা সম্ভব না হলে ও জ্যামাইকা তার যোগ্য উত্তরসূরি চাইতেই পারে। এমিলিয়া থম্পসনের পাশে হলুদ- সবুজ জার্সিতে আরেকজন কে দেখার অপেক্ষায় আরো চারবছর হয়তো অপেক্ষা করবে পুরো বিশ্ব।