২০২১-২০২২ সিজনের সামার ট্রান্সফার উইন্ডো এর মত এমন উত্তেজনা এর আগে কখনো কোনো কাজ করেছে কিনা ফুটবল সমর্থক থেকে শুরু সাংবাদিক ক্লাব কর্তৃপক্ষ তা ঠিক হলপ করে বলা সম্ভব নয়। কেননা এবারই প্রথম বারের মত ক্লাব ছাড়লেন লিও মেসি আবার তার কিছুদিন পরেই জ্যুভেন্টাস ছেড়ে যেই ক্লাবে তাঁর উত্থান সেই ক্লাব ম্যানচস্টার ইউনাইটেডে ফিরে গেলেন রোনালদো। সময়ের দুই সেরা তারকা যেখানে ক্লাব ছাড়ছেন সেইখানে উত্তেজনা তো থাকবেই, তবে এবারের নাটকীয় সব মোড় আর ফুটবলারদের তালিকাএ জৌলুসটুকু সব আলো কেড়ে নিয়েছে নিজের দিকে। তাতে ২০১৭/১৮ সিজনের নেইমারের রেকর্ড ট্রান্সফার ফি এর রেকর্ড হয়ত ভাঙ্গেনি কিন্তু ফিকে পড়েছে ঠিকই।

5e52faa3188e4d3cb71637917719046e 18 - ArenaHype

এবারের ট্রান্সফার উইন্ডো এর নাটকীয়তার শুরু মেসির চুক্তিকে নিয়ে। গত সিজনে ক্লাব চাড়তে চাইলেও শেষ পর্যন্ত থেকে গিয়েছিলেন কিন্তু এবার মনেপ্রাণে বার্সাতেই থাকতে চাইলেন। বাঁধ সেধে বসল লা লিগা কর্তৃপক্ষের নিয়ম। ৭০% এর চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করা যাবেনা খেলোয়াড়দের বেতনের  ক্ষেত্রে। মেসি তাই ৫০% বেতন নিতে চাইলেন কিন্তু করোনার কারণে ক্লাবের বাজে  অর্থনৈতিক অবস্থা তা আর হতে দিল না। সেই কারণে ৮ই আগস্ট জানিয়ে দিতে হল পুরো  ক্যারিয়ার  জুড়ে অবস্থান করা একমাত্র ক্লাব বার্সাকে । এরপর ভাবা হচ্ছিল হয় তিনি ম্যানচেস্টার সিটিতে যাবেন নয়ত পিএসজিতে। কিন্তু আগে থেকেই ম্যান সিটি জ্যাক গ্রিলিশকে ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে কিনে নেয় কিন্তু তারপরও এই গুঞ্জন সেই গুঞ্জন শেষে পিএসজি যোগ দেন ১০ই আগস্ট একদম ফ্রি ট্রান্সফার ফিতে।

এর রিয়াল ডিফেন্ডার রামোস ও যোগ দেন পিএসজিতে ফ্রিতে,দেনেরোমাকে ইন্টার মিলান থেকে খেলাইফি ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে দলে ভেড়ান। এরপর শুরু হয় এম্বাপ্পেকে নিয়ে নাটকীয়তা। তিনি নাকি আর পিএসজিতে খেলবেন না,যোগ দিতে চান রিয়াল মাদ্রিদে। এরপর অফিসিয়াল বিডিং দেয় রিয়াল। প্রথমে ১৬০মিলিয়ন ইউরো দেয়া হলেও তা প্রত্যাখান করে পিএসজি। সর্বশেষ ১৮০মিলিয়নের বিড দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।শেষ পর্যন্ত তা প্রত্যাখান করেছে পিএসজি। ফলে আগামী সিজনে ফ্রিতেই যোগ দিবেন রিয়ালে যেহেতু চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে এই সিজনে।  অন্যদিকে রোনালদোর ফের রিয়ালে ট্রান্সফার নিয়ে সব গুঞ্জন নিয়ে রোনালদো নিজেই সাফ জানিয়ে দেন তাঁর ব্যাপারে সবই গুঞ্জন। এর দুইদিনের মাথায় তিনি জানান তিনি জ্যুভেন্টাসে থাকবেন না। এরপর শুরু হয় তাঁর এজেন্ট মেন্দিসের সাথে ক্লাবগুলোর বনিবনা। গুঞ্জন চলে তিনি পিএসজি অথবা ম্যান সিটিতে যোগ দিবেন। ম্যান সিটির গুঞ্জন নিয়ে সোস্যাল মিডিয়াতে ঝড় চলতে থাকে। ট্রল শুরু করে ম্যান ইউ আর রিয়ালের এর সমর্থকেরা। ঠিক এমন সময়ে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের একটি কল বদলে দেয় পুরো চিত্র। ২৬ আগস্ট পর্যন্ত যেখানে মোটামুটি নিশ্চিত ২৭ তারিখেই সেই ম্যান সিটি বিড বাদ দিয়ে দেয়। বিকেলেই মাঠে নামে ম্যান ইউ রোনালদোকে পাওয়ার জন্য এবং কোনো এজেন্ট নয় এইবার ব্রুনো ফার্নান্দেজ পুরো চুক্তিটি সম্পাদনা করান। ২৪ মিলিয়ন ইউরোতে ঘরে ফেরেন CR7।

এর আগে ম্যান ইউতে যোগদেন সাঞ্চো আর রোনালদোর সাবেক সতীর্থ রাফায়েল ভারানে ।আলাবা যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদে। অন্যদিকে লুকাকু যোগদেন তাঁর সাবেক ক্লাব চেলসিতে। বার্সাতে যোগ দেন মেম্ফিস ডিপাই,এরিক গ্রাসিয়া আর কুন আগুয়েরো। মরিবা ক্লাব ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি লিপগিজে যোগ দিচ্ছেন যদিও টটেনহাম তাঁকে কিনতে চেয়েছিল অন্য দিকে এমারসনকে বিক্রি করে ২ কোটি ১০ লাখ ইউরো পাচ্ছে বার্সা।

240820697 2564300343705443 4248666895861543731 n - ArenaHype
এই সিজনে ট্রান্সফার হওয়া খেলোয়াড়রা

এতো গেল কে কোথায় যোগ দিলেন তাঁর ব্যাপার। এক মেসি এবং রোনালদো এর ক্লাব ছাড়ার খবরে বাংলাদেশেই যতটা উত্তেজনা ছিল তার চেয়ে বেশি উত্তেজনা কাজ করছে সোস্যাল মিডিয়া আর শেয়ার মার্কেটে আর স্পন্সরদের মধ্যে । প্রথমেই যদি দেখা যায় বার্সা তাঁদের প্রধান স্পন্সর বেকো এবং রকুটেন তাঁদের স্পন্সরশিপের চুক্তি গত বছর মেসির বার্সায় থেকে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এক সিজন বৃদ্ধি করে । আবার মেসি যখন চলে যাচ্ছেন তখন বার্সা  তাঁদের ফ্রেন্ডলি ম্যাচগুলোতে মেসি খেলার জন্য যে অর্থ পেত তা আর পাবে না। আবার দেখা যাচ্ছে মেসি থাকাকালিন শুধু টিশার্ট বিক্রি করেই বার্সা প্রায় ২০ মিলিয়ন ইউরো আয় করত কেননা তাঁদের বিক্রিত ৯টা শার্টের ৮টার পিছনেই মেসি লেখা থাকত।এর আগে নেইমার চলে যাওইয়ার সময়েও বার্সাকে অনেক স্পন্সর হারাতে হয়েছে।  আবার এই খেলোয়াড়রা কতটা গুরুত্পূর্ণ ভূমিকা রাখে কোনো পণ্যের বিক্রির ক্ষেত্রে তা বোঝা যায় জুনের ১১ তারিখ ৯.৪০( 9.40 am EST) এর সময় রোনালদোর সেই কোকাকোলার বোতল সরিয়ে দেয়ার ঘটনা থেকে। মাত্র তিন মিনিটেই কোকাকোলার শেয়ারের দরপতন হয় ৪ বিলিয়ন ডলার। আবার মেসির জন্যই দেখা যেত প্রায় ১০% পর্যটক আসত বার্সেলোনাতে ঘুরতে (প্রধানত মেসির খেলা দেখতে ) এবং মেসি একাই করোনা শুরুর আগে বার্সার আয়ে  ১৩০-২০০ মিলিয়ন অর্থ যোগ করতে পারতেন । ম্যান ইউ শুধু রোনালদোকে কেনার পর পর ই তাঁদের শেয়ারের প্রায় ৮% দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্র্যান্ড ভ্যালু বেড়েছে ১০%। অন্যদিকে জ্যুভেন্টাস তাঁদের ব্র্যান্ড ভ্যালু হারিয়েছে প্রায় ১৫%। সোস্যাল মিডিয়াতে এর প্রতিক্রিয়াটি চখে পড়ার মত । একদিনে ম্যান ইউ এর  প্রায় ৭ লাখ অনুসারী বেড়েছে ফেসবুকে এবং ইন্সটাগ্রামে তা ১ মিলিয়ন।

GK8p8 K7 - ArenaHype
এই ছবিটিই ইন্সটাগ্রামে সাড়া ফেলে দিয়েছে

পোস্টে ইউনাইটেডে প্রথম দফায় রোনালদোর হাসিমুখের কয়েকটি ছবি ‘কোলাজ’ করে দেওয়া ছিল।ইনস্টাগ্রামে এই পোস্টে ভালোবাসা জানিয়েছেন ১ কোটি ২৯ লাখ ৩৪ হাজার ৯৩৬ জন। খেলাধুলার ইতিহাসে আর কোনো দলের কোনো পোস্টে এত সাড়া কখনো পড়েনি।

এতো গেল কঠিন সব ব্যাপার, যদি বাংলাদেশের দিকে তাকানো হয় দেখা যাবে শুধু মেসি আর রোনালদো এর ক্লাব ছাড়ার ঘটনায় নতুন ক্লাবের জার্সির বিক্রি বেড়ে যায় দ্বিগুণ বা তার ও বেশি। ফলে বেশ চড়া লাভও হয়েছে বিক্রেতা মহলের এতে। 

241012396 10158847925022746 130334848412160425 n - ArenaHype
সমর্থকগন আশা করছেন আবারো ফিরবে সেই সুদিন ম্যান ইউ এর

তবে ১৮৮৬ সাল থেকে  পরবর্তীতে ১৮৮৮ সালে ফুটবল লিগের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলে একদম ঘটা করে শুরু হওয়া ট্রান্সফার মার্কেটে আজ পর্যন্ত ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়দের পিছনে ব্যয় করা ৭.১ বিলিয়ন ইউরো বা নেইমারের রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরোর ট্রান্সফারের চেয়ে এবারের মেসির ফ্রিতে বার্সা ছাড়া কিংবা মাত্র ২৪ মিলিয়ন ইউরোতে রোনালদো এর ম্যান ইউতে ফেরা অথবা এমবাপ্পকে কেনার জন্য রিয়ালের দেয়া বিড প্রত্যাখান এই ঘটনা গুলো ছাপিয়ে গেছে প্রতিটা সিজনের উত্তেজনার মাত্রাকে। ৯০ মিনিটের ফুটবল যে ম্যাচের বাইরেও কম সাস্পেনশনের জন্ম দেয়না সেইটা কে বলবে?